প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ জুন : শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির জন্য অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় রান্না করা খাবার ।সেই খাবারের মেনুতে ’সাপ’ থাকবে এমনটা বোধহয় সকলের কল্পনারও অতীত। কিন্তু বাস্তবেই বুধবার ’সাপ’ সহ খিচুড়ি রান্না হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বাগকালাপাহাড় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে।আর ওই খিচুড়ি খেয়েই ভয়ে আতঙ্কে অসুস্থতা অনুভব করতে শুরু করে শিশুরা।চিকিৎসার জন্য দুপুরে ছয় শিশুকে নিয়ে আসা হয় জামালপুর ব্লক হাসপাতালে । এই ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।খবর পেয়েই ব্লকের বিডিও ও সিডিপিও জামালপুর ব্লক হাসপাতালে ছুটে গিয়ে শিশুদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এমন ঘটনা কি ভাবে ঘটলো তার তদন্ত ব্লক প্রশাসন শুরু করেছে ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , জামালপুর ব্লকের পাড়াতল ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বাগকালাপাহাড়। শিশু ও গর্ভবতী মিলিয়ে ওই গ্রামের ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পুষ্টিদায়ক খাবার পাওয়ার জন্য ৫৪ জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে । তাঁরা মূলত খোরদোপলাশি, কাঠালডাঙা ও বাগকালাপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা।অন্যান দিনের মতো এদিনও ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খিচুড়ি রানা হয় ।বেলা ১০টার মধ্যে রান্না শেষ হলে শিশু ও গর্ভবতীদের কেউ থালা ,কেউ বাটিতে করে সেই খিচুড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে যান । ঘরে বসে খিচুড়ি খেতে গিয়ে এক শিশুর অভিভাবকদের চোখ কপালে ওঠে।তাঁরা দেখেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া গরম খিচুড়ির মধ্যে একটি ’মরা সাপের বাচ্চা’ রয়ে আছে । এমনটা দেখেই ওই শিশু ও তাঁর পরিবারের লোকজন অাঁতকে ওঠেন ।তাঁরাই ছুটে গিয়ে গ্রামের অন্য শিশুর পরিবার ও গর্ভবতীদের বিষয়টি জানান ।খিচুড়ি না খাওয়ার জন্যে তাঁদের বলেন। ততক্ষণে যে যে শিশুরা খুচুড়ি খেয়ে ফেলেছিল তাঁদের অভিভাবকরা ঘটনার কথা জেনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ।ভয়ে আতঙ্কে শিশুরা শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করা শুরু করলে দুপুরে তাঁদের জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় । চিকিৎসকরা শিশুদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে বেশ কিছু সময় তাদের অবজারভেশনে রাখেন ।বেশ কিছুক্ষণ অবজারভেশনে রেখে তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় ।
হাসপাতালে আসা এক শিশুর মা গৌরি মুদি বলেন ,এদিন তাঁদের বাগকালাপাহড় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যে খিচুড়ি রান্নি হয়েছিল তাতে সাপ ছিল । ওই সাপ সহ রান্না খিচুড়ি সবাইকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় । অজান্তে সেই খিচুড়ি আমি ও আমার বাচ্চা খাওয়া শুরু করি। খেতে খেতেই হঠাৎ থালায় গোটা সাপের বাচ্চা দেখতে পাই ।এর পরেই দ্রুত শিশু সন্তানকে নিয়ে জামালপুর হাসপাতালে ছুটে যাই । হাসপাতালে থাকা অপর শিশুর মা রেখা মুদি বলেন,’আমাদের বাগকালাপাহাড় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খিচুড়ি রান্না হওয়ার সময়ে তাতে আস্ত একটা সাপ পড়ে যায় । সেটা কেন্দ্রের কেউ খেয়াল করে নি । সাপ সহই খিচুড়ি রান্না হয়ে যায় । সেই খিচুড়ি শিশু ও গর্ভবতীদের দেওয়াও হয়ে যায় ।খিচুড়ি খাওয়ার সময়ে জানা জায় সাপ সহ খিচুড়ি রান্না হয়েছে । সেই খিচুড়ি আমার বাচ্চা খেয়ে ফেলেছে। গ্রামের লোকজনই বিষয়টি দ্রুত অন্যদের জানায় । তারা আর কেউ তাঁদের সন্তানদের ও পরিবারের গর্ভবতীদের ওই খিচুড়ি খাওয়ান না । রেখা মুদি বলেন ,অন্যদের মতো আমিও আতঙ্কে রয়েছি । তাই আমি আমার শিশু সন্তান কে নিয়ে জামালপুর হাসপাতালে ছুটে এসেছি । শিশুদের সঙ্গে এদিন দুপুরে হাসপাতালেই ছিলেন ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দিদিমণি জ্যোৎস্না ঘোষ। তিনি বলেন, কেন্দ্রের খিচুড়ি রান্না করার সময়ে তাতে আস্ত একটা সাপের বাচ্চা কখন পড়ে যায় তা কারুর নজরে আসে নি । সাপ সহ খিচুড়ি রান্না হয়ে যাবার পর সেন্টারের শিশু ও প্রশুতিদের তা বিতরণও করে দেওয়া হয় ।এক শিশু বাড়িতে গিয়ে খিচুড়ি খাওয়ায় সময়ে তাতে সাপ দেখতে পায় । ওই শিশু ও তাঁর পরিবার থালা সমেত ওই খিচুড়ি সেন্টারে নিয়েএসে দেখায় । জ্যোৎস্নাদেবী বলেন ,তখন তিনিও দেখেন খিচুড়িতে আস্ত একটা মরা সাপ রয়ে আছে । আট জন শিশু ওই খিচুড়ি খেয়ে ফেলে ছিল । তাঁদের হাসপাতালে পাঠিয়ে বাকিদের খিচুড়ি না খাওয়ার জন্য বলে পাঠানো হয় ।
জামালপুর হাসপাতাল বিএমওএইচ ঋত্বিক ঘোষ বলেন, শিশুদের তেমন কোন অসুস্থতা দেখা যায় নি।তবুও ছয় শিশুকে বেশ কিছুটি সময় অবজারভেশনে রেখে পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে এতবড় ঘটনা ঘটলেও জামালপুর ব্লকের সিডিপিও সুশোভন রায় মুখে কার্যত কুলুপ অাঁটেন ।তিনি শুধু সংবাদ মাধ্যমের কাছে গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রেচেষ্টা চালিয়ে যান।বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,“শিশুদের বড় কোন বিপদ হয় নি এটাই রক্ষে । খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা কাউকে কিছু না জানিয়ে এদিন কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিলেন । তিনি এলাকার অন্য এক জনকে এদিনের রান্নার জন্য দায়িত্ব দিয়ে যান । এটা সহায়িকা করতে পারেন না । কেন্দ্রের দিদিমণিরও তাকে রান্না করতে দেওয়া ঠিক হয় নি । সেই জন্য ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সবাইকে শো-কজ নোটিশ ধরানো হয়েছে । শো-কজের উত্তর সন্তোষজন না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’
আইসিডিএস এর জেলা প্রকল্প আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন,এই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। কারওর কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে। এসডিও (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন,’সিডিপিও একটি রিপোর্ট দিচ্ছে। ওই রিপোর্ট দেখেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মহকুমাশাসক কথা বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে একটা রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পেশ করা হবে ।’।