প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৭ জুন : বয়স একটা সংখ্যা মাত্র।এটাই যে সত্য, সেটা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখালেন আশি ছুঁই ছুঁই অনিমা তালুকদার ।আন্তর্জাতিক স্তরের হাঁটা ও দৌড় প্রতিযোগীতা অংশ নিয়ে এক জোড়া স্বর্ণ পদক জয় করে তিনি নজির সৃষ্টি করেছেন।জাতীয় স্তরের পর আন্তর্জাতিক মঞ্চেও অনিমাদেবী এমন অভূতপূর্ব সাফল্যপাওয়ায় খুশি পূর্ব বর্ধমানের কালনার ক্রীড়া মহল ও বাসিন্দারা।বৃদ্ধার এমন নজিরবিহীন কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানাতে মঙ্গলবার তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যান রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ । তিনি অনিমাদেবীর হাতে পুষ্পস্তবক ও মানপত্র তুলেদিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁর কঠিন মনোবলেরও তারিফ করেছেন ।
কালনার কৃষ্ণদেবপুর গ্রামে বাড়ি ৭৯ বছর বয়সী অনিমা তালুকদারের।তিনি স্থানীয় বাধাগাছি জুনিয়ার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন ।তাঁর দুই কন্যা অঞ্জলী ও অসীমা বিবাহিতা।ছেলে অরুণাংশু তালুকদার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক।প্রায় বছর ১৯ আগে শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নেন অনিমাদেবী । তবে কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেও নিয়ম করে হাঁটা, শরীর চর্চা এইসব অনিমাদেবী বন্ধ করেননি । তেমনই আশির দোরগোড়াও পৌছেও তিনি লাগাম টানেননি সমাজসেবা মূলক কাজে।সুখে-দুঃখে পাশে থাকার জন্যে অনিমাদেবী এলাকাবাসীর মনের।মণিকোঠায়ও জায়গা করে নিয়েছেন । তাই তাঁর সাফল্যে খুশি কৃষ্ণদেবপুর গ্রামের আপামোর বাসিন্দা ।
মনোবলকে সম্বল করে কয়েক বছর আগে
অনিমাদেবী চেন্নাইয়ে হওয়া জাতীয় স্তরের হাঁটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। সেবার তিনি রৌপ্য পদক জয় করে ঘরে ফেরেন।তার পর থেকেই তিনি শুরু করেদেন আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি ।গত ৪ ও ৫ জুন সিঙ্গাপুরে ৪৫ তম এসএমটিএফএ আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রতিযোগিতার তিনটি ইভেন্টে অংশগ্রহন করেন আশির তরুণ তুর্কী অনিমাদেবী।তার মধ্যে ৩ কিলোমিটার হাঁটা প্রতিযোগিতা ও ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় তিনি জোড়া স্বর্ণ পদক ছিনিয়ে নেন।এছাড়াও ’শর্টপার্ট থ্রো’ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান পেয়ে তিনি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন।পদক জয় করে অনিমাদেবী মঙ্গলবার কৃষ্ণদেবপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরতেই উচ্ছাসে ভাসেন তাঁর পরিবার পরিজন ও এলাকাবাসী ।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে বৃদ্ধা মায়ের এই সাফল্যে যারপরনাই খুশি দুই মেয়ে অসীমা ও অঞ্জলী। তাঁরা জানান,“তাঁদের মা অনিমাদেবী কর্ম জীবন থেকে অবসর নিলেও মনের শক্তিতে তিনি যুবক যুবতীদেরকেও টেক্কা দেন । তিনি কখনও কাউকে বুঝতেই দিতে চান না যে তাঁর বয়স আশির দোরগোড়ায় পৌছে গিয়েছে । এখনও পর্যন্ত হাঁটাটা মা অনিমাদেবীর নিত্যদিনের রুটিন।এছাড়াও শরীর সুস্থ রাখতে যা যা করনীয় তার সবই নিয়মকরে করেন তাঁদের মা।পাশাপাশি সমাজসেবা মূলক কাজও তিনি সমানভাবে করে যান। অঞ্জলীদেবী বলেন,তাঁর “মা হেঁটে ও দৌড়ে এখনও পর্যন্ত নিজের শরীরকে ফিট রেখেছেন।সেই ফিটনেসটাই আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগীতায় তাঁর মায়ের সফল হওয়ার চাবিকাঠি। অনিমাদেবীর ছেলে ডাঃ অরুণাংশু তালুকদার এদিন বলেন , বয়স শুধু একটা সংখ্যামাত্র। মনের জোর আর ইচ্ছা শক্তিটাই শেষ কথা।আশি বছরের দোরগোড়ায় পৌছেও যে কাজকর্মের পাশাপাশি হাঁটা, দৌড়ানো ও শর্টপার্ট থ্রো প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া যায় সেটা তাঁর মা প্রমাণ করে দেখাতে পেরেছেন। পদক জয় করে তাঁর মা সেটা সবাইকে বুঝিয়েও দিতে পেরেছেন। তাঁর মায়ের এই জয়টা শুধু নিছকই একটা জয়ই নয়।তাঁর মায়ের সাফল্য সবার কাছে অনুপ্রেরণারও বটে । অরুণাংশু বাবু বলেন,তাঁর মায়ের সাফল্য অন্য বয়স্কদেরকেও শরীর ফিট রাখার বিষয়ে উৎসাহ জোগাবে ।
অনিমাদেবী বলেন,’প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা ও শরীর চর্চা করার গুরুত্ব অপরিসীম। সেটাই
আমি বরাবর করে যাচ্ছি। এরসাথে খাবার দাওয়ারের ব্যাপারে লোভ ত্যাগ করতে হবে ।
অপরিমিত আহার শয়ীর ভালো রাখে । আর সবথেকে বড় বিষয়টি হল মনের জোর হারালে
চলবে না ।অনিমাদেবী দাবী করেন ,এই কয়েকটি বিষয়ই তাঁর স্বর্ণপদক জয়ের চাবিকাঠি ।’
রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবানাথ বলেন,’অসম্ভব
মনের জোর আর প্রাণশক্তি না থাকলে এমন সফল্য পাওয়া সম্ভব নয়।বয়সে আশির দোরগোড়ায় পৌছে গিয়েও আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে জোড়া স্বর্ণ পদক জয় করে অনিমাদেবী দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন।তাই কুর্নিশ জানানোর জন্যে অনিমা দেবীর কাছে না এসে পারিনি। স্বপন বাবু আরও বলেন ,আমার মনে হয় বয়স্কদের অনিমাদেবীকে আইকন মানা উচিত ।বয়স কালেও সুস্থ থাকার জন্য অনিমাদেবীর টিপস মেনে চললে সবাই উপকারই পাবেন ।’।