জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,০৬ জুন : গত কয়েক বছর ধরে যে কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠী বাংলা সাহিত্যচর্চাকে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে তাদের অন্যতম হলো ‘প্রাণের আলো’ সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠী। মূলত প্রচারের বাইরে থেকে দীর্ঘদিন ধরে এই গোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সাহিত্যচর্চা করে গেছে। সম্প্রতি এই পত্রিকা গোষ্ঠী ডিজিটাল মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই পাশে পেয়ে যায় একগুচ্ছ সাহিত্যপ্রেমী মানুষকে। সদস্যদের আগ্রহে এবং কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী মানুষের সক্রিয় সহযোগিতায় এই গোষ্ঠী পত্রিকা প্রকাশেও উদ্যোগ নেয়।
‘প্রাণের আলো’ সাহিত্য পরিবারের উদ্যোগে এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রায় পঞ্চাশ জন নবীন-প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকের উপস্থিতিতে গত ৫ ই জুন কলকাতার বিপ্লবী নলিনী গুহ সভাঘরে ৬০ জন কবি-সাহিত্যিকের ভিন্ন স্বাদের সৃষ্টি সমৃদ্ধ ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এটি ছিল পত্রিকা গোষ্ঠীর দ্বিতীয় বর্ষ। একই দিনে বাঙালির অন্য একটি জনপ্রিয় সামাজিক অনুষ্ঠান থাকার জন্য প্রত্যাশার থেকে কম সংখ্যক কবি উপস্থিত হন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাহিত্যিক সুশান্ত ঘোষ, বর্ষীয়ান কবি ও সঙ্গীত শিল্পী সমরেশ চক্রবর্তী, ‘বাক ও ধ্বনি’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা কবি শঙ্খচূড় চক্রবর্তী, ‘শব্দের ঝঙ্কার’ পত্রিকার সম্পাদক কবি সুনীল মুখোপাধ্যায়, ‘আনন্দ প্রকাশন’ এর কর্ণধার নিগমানন্দ মণ্ডল, ‘এক বৃন্তে দুটি কুসুম’ পত্রিকার সম্পাদিকা মায়া নাথ, ‘রিশিকা’ পত্রিকার সম্পাদিকা সোমা কর কবি অশেষ বন্দোপাধ্যায়, ‘প্রাণের আলো’ সাহিত্য পরিবারের সম্পাদিকা চিত্রা কুন্ডু বারিক সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এবং বেশ কয়েকজন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ।
স্বরচিত কবিতা পাঠ, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা প্রভৃতিতে মেতে ওঠে অনুষ্ঠানটি। প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকরা কাব্য-সাহিত্যের বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক নবীন কবিদের সামনে তুলে ধরেন এবং সাহিত্যকে ভালবেসে সাহিত্যচর্চার পরামর্শ দেন। নবীন কবিরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করে উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশংসা আদায় করে নেয়।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন কবি সুশান্ত ঘোষ। তাকে সহযোগিতা করেন মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে গলায় উত্তরীয় পড়িয়ে এবং হাতে মেমেণ্টো দিয়ে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। এছাড়া উপস্থিত প্রতিটি কবির হাতে তুলে দেওয়া হয় মেমেণ্টো ।
সঠিক অর্থে সাহিত্যচর্চা বলতে যা বোঝায় সেটা না হলেও বিদ্যালয় জীবন থেকেই আত্ম বিশ্লেষণে ব্যস্ত থাকতেন পশ্চিম বর্ধমানের রূপনারায়নপুরের মেয়ে চিত্রা কুন্ডু। মনের মধ্যে ইচ্ছে ছিল একটা সাহিত্যচর্চা গোষ্ঠী গড়ে তোলা। বিভিন্ন কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে কলকাতার টালিগঞ্জে এসে বাস করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে সেই ইচ্ছা। প্রথমে স্বামীর সমর্থন খুব একটা ছিলনা। তারপর তিনিই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে বড় প্রেরণাদাতা। পুত্রও মায়ের পাশে থাকে। পরিবারের সমর্থনের সঙ্গে সঙ্গে চিত্রা দেবী পাশে পেয়ে যান একগুচ্ছ কবি-সাহিত্যিককে। তার স্বপ্ন আজ বাস্তবের জগতে ডানা মেলে দেয়। এভাবেই বাংলা সাহিত্য জগত পেয়ে যায় এক প্রকৃত সাহিত্য সাধিকাকে।
চিত্রা দেবীর উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে কবি সুশান্ত ঘোষ বলেন,’সাহিত্যের টানে যেভাবে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে চিত্রা সাহিত্য সাধনা করে চলেছে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। ওর ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকা যায় না ।’
উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথি, কবি প্রমুখদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিত্রা দেবী বলেন – প্রবীণ কবিদের পাশাপাশি নবীন কবিদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমরা এই পত্রিকাগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছি। আশাকরি এই পত্রিকার হাত ধরে আগামী দিনে নতুন নতুন প্রতিভা উঠে আসবে। তখনই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে ।।