এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়া দিল্লি,০৫ জুন : কথিত ধর্মনিন্দার অভিযোগে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে ইসলামপন্থীদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে । এবার এই বিতর্ক থেকে পাশ কাটাতে নূপুর শর্মাকে দল থেকে বহিষ্কার করল বিজেপি । সেন্ট্রাল ডিসিপ্লিনারি কমিটির সম্পাদক ওম পাঠক নেত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন-মাননীয় মহাশয়া, আপনি বিভিন্ন বিষয়ে পার্টির অবস্থানের বিপরীত মতামত প্রকাশ করেছেন,যা ভারতীয় জনতা পার্টির সংবিধানের ১০(এ) আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ।আপনাকে জানানোর জন্য আমায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে পরবর্তী তদন্ত পর্যন্ত আপনাকে দল থেকে এবং দলীয় দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হল । এই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে ।’ যদিও কেন এই সাসপেন্সন তা উল্লেখ করা হয়নি চিঠিতে । এযাবৎ দলীয়ভাবে এনিয়ে বিবৃতিও দেওয়া হয়নি । তবে সম্প্রতি জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে একটি টিভি চ্যানেলে বিতর্কে অংশ নিয়ে নবী মোহাম্মদের বিরুদ্ধে তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শর্মার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । নূপুর শর্মার পাশাপাশি নবীন কুমার জিন্দালকেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ।
এর আগে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ‘ভারতের হাজার বছরের ইতিহাসে প্রতিটি ধর্মেরই সহবস্থান ঘটেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি সব ধর্মকে সম্মান করে। যে কোনও ধর্মের কোনও ধর্মীয় ব্যক্তির অবমাননার তীব্র নিন্দা বিজেপি । সেই সমস্ত চিন্তাভাবনা যা কোনও সম্প্রদায় বা ধর্মকে অবমাননা করে, তার বিরুদ্ধে বিজেপি । বিজেপি এই ধরনের মানুষ বা নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না । ভারতের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে তার পছন্দের যে কোনো ধর্ম পালন করার এবং প্রতিটি ধর্মকে সম্মান করার অধিকার দেয় ।’ তিনি আরও জানান, ‘ভারত স্বাধীনতার ৭৫ তম বছর উদযাপন করছে । আমরা ভারতকে একটি মহান দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,যেখানে সবাই সমান এবং সকলে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করে,যেখানে সবাই ঐক্যের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,যেখানে সকলেই উন্নতি ও অগ্রগতির ফল ভোগ করে ।’
কিন্তু সেদিন টিভি বিতর্কে ঠিক কি বলেছিলেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা ? জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন নূপুর শর্মা বলেছিলেন,মানুষ যদি ক্রমাগত হিন্দু ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে, তাহলে তিনিও ইসলামের সঙ্গে একই কাজ করতে পারেন। তারপরে তিনি মজার ছলে নবী মহম্মদের সাথে জড়িত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন । পরে অল্ট নিউজের কথিত ফ্যাক্ট পরীক্ষক মোহাম্মদ জুবায়ের ওই বক্তব্যের ক্লিপ বের করে ভাইরাল করে দেয় । যার জেরে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে । এরপর ২৭ শে মে থেকে নূপুর শর্মা প্রাণনাশ ও ধর্ষণের হুমকি পেতে শুরু করেন । শুধু ভারত নয়, পাকিস্তান থেকেও প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন নূপুর শর্মা । তাঁর মাথার দাম পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ।
নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে এযাবৎ তিনটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে । সন্দেহভাজন ইসলামী সংগঠন রাজা একাডেমির অভিযোগের ভিত্তিতে ২৯ মে প্রথম এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়। মুম্বরার বাসিন্দা মহম্মদ গুরফান নামে এক ব্যক্তি দ্বিতীয় এফআইআর নথিভুক্ত করে । তৃতীয় এফআইআর নথিভুক্ত করা হয় হায়দ্রাবাদ থেকে । কিন্তু যার ভিডিও ক্লিপ দেখে এত হিংসা ছড়াল দেশ জুড়ে,সেই কথিত ফ্যাক্ট পরীক্ষক মোহাম্মদ জুবায়ের বিরুদ্ধে এযাবৎ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ।।