প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ জুন : অনলাইন নয় ।শিক্ষকদের পরামর্শ মেনে ’টেক্সট বই’ খুঁটিয়ে পড়েই মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান ছিনিয়ে নিয়েছে বর্ধমানের সিএমএস স্কুলের ছাত্র রৌণক মণ্ডল ।তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৩ ।রবীন্দ্রনাথের গানের একান্ত ভক্ত রৌণক মণ্ডল বিজ্ঞান নিয়ে আরও পড়াশুনা করে বড় ডাক্তার হতে চায়।ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত তাঁর বাবা মা। গর্বিত বিদ্যালয় শিক্ষক ও রৌণকের প্রাইভেট শিক্ষকরা ।
রৌণকের পরিবার পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার কুকুরা গ্রামের বাসিন্দা।তাঁর বাবা কুন্তল মণ্ডল খণ্ডঘোষের শিকারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক । মা সুদীপ্তা মণ্ডল সাধারণ গৃহবধূ।একমাত্র সন্তান রৌণকের লেখাপাড়র প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় ছোট বয়স থেকেই ।তা দেখে কুন্তল বাবু ও সুদীপ্তাদেবী সিদ্ধন্ত নিয়ে নেন লেখাপড়া শেখার জন্য তাঁরা রৌণককে বর্ধমানের সিএমএস ষ্কুলে ভর্তি করবেন।সেই মত বর্ধমানের শহরের গোলাহাট এলাকায় বাাড়ি ভাড়া নিয়ে তাঁরা থাকা শুরু করেন। একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে সিএমএস স্কুলেই শুরে হয় রৌণকের লেখাপড়া জীবন ।স্কুলের প্রর্তি ক্লাসের পরীক্ষায় ভালভাবে পাশ করে এসে এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে রৌণক । সেই পরীক্ষাতেও নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে কৃতী ছাত্র রৌণক প্রথম স্থান ছিনিয়ে নিতে পেরেছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষণা হবে বলে শুক্রবার সকাল থেকেই টেলিভিশনের খবরের দিকে নজর ছিল রৌণক ও তাঁর বাবা মায়ের ।
মাধ্যমিক পর্ষদ এইবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায়
যুগ্মভাবে প্রথম স্থানাধিকারী হিসাবে বাঁকুড়ার রামকৃষ্ণ মিশন হাইস্কুলের অর্ণব ঘড়াই ও পূর্ব
বর্ধমানের সিএমএস হাইস্কুলের রৌণক মণ্ডলের নাম ঘোষণা করে। তা শোনার পরেই উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙে রৌণকের বাড়িতে ।শুভেচ্ছা জানাতে বহু শিক্ষানুরাগী মানুষজন রৌণকদের বাড়িতে ভিড় জমান ।এমনকি এই সাফল্যের খবর পেয়ে জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রামশংকর মণ্ডলও এদিন রৌণকের বাড়িতে পৌছে যান।তিনি রৌণকে সম্বর্ধনা জনানোর পাশাপাশি তার বাবা মাকেও শুভেচ্ছা জানান ।
এদিন সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রৌণক মণ্ডল জানিয়েছে,ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে ’করোনার’ জন্যে তাঁর পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটে ।তখন অনলাইনে পড়াশুনা করতে হয় । যাটা তাঁর পছন্দের ছিল না ।রৌণক জানিয়েছে,টেক্সট বই এর বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। সেই কারে সে টেক্সট বই খুঁটিয়ে পড়ে কোশ্চেন সলভ করার ব্যাপারেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল। আর সেটাই তাঁর সাফল্যের চবিকাঠি বলে
রৌণক এদিন দাবী করেছে । একই সঙ্গে সে জানিয়েছে,দশম স্থানের মধ্যে তাঁর নাম নিশ্চই থাকবে এমনটা প্রত্যাশা ছিল । তবে একেবারের প্রথম স্থান লাভ করার বিষয়টি তাঁর কাছে অপ্রত্যাশিতই ছিল । রৌণক আরও জানায় ,কোন বাঁধাধরা সময় নয় । গড়ে প্রতিদিন ৮-৯ ঘন্টা সে পড়াশুনা করতো । স্কুলে পড়ার পাশাপাশি সাত জন প্রাইভেট শিক্ষকের কাছেও সে পড়তো বলে জানিয়েছে । জীবন বিজ্ঞান ও গণিত তার প্রিয় সাবজেক্ট । শিক্ষামূলক সিনেমা দেখত তাঁর ভলো লাগে ।সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা রৌণকের মন কেড়েছে ।গানও শিখতো রৌণক । রবীন্দ্র সংগীত গাইতে তাঁর ভালো লাগে । মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যে সে গান শিখতে যাওয়া বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল বলে রৌণক জানিয়েছে। রৌণক জানিয়েছে ,বড় ডাক্তার হওয়ার লক্ষ সামনে রেখেই সে লেখাপড়া আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ।
কুন্তল বাবু ও সুদীপ্তাদেবী জানিয়েছেন, ছেলের সাফল্যে তাঁরা গর্বিত হয়েছেন । এই সাফল্যের জন্য বিদ্যালয় শিক্ষক ও প্রাইভেট শিক্ষকদের অবদান ভোলার নয়।ছেলে রৌণক আগামী দিনেও যতদূর পড়শুনা করতে চাইবে তাঁরা পড়াবেন । তার জন্যে যত কষ্টই হোক সব সয়ে নেবেন বলে সুদীপ্তাদেবী জানিয়েছেন।
পর্ষদের ঘোষনা অনুযায়ী রৌণক ছাড়াও বর্ধমানে আরো কয়েক জন ছাত্র ছাত্রী মাধ্যমিকে দশের মধ্যে স্থান করেছে। বর্ধমানের বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী সামিনা ইয়াসমিন পঞ্চম স্থান লাভ করেছে । এছাড়াও মিউনিসিপাল গার্লস স্কুলের শ্রীজিতা গোস্বামী ষষ্ঠ স্থান লাভ করেছে। নবম স্থানেও বর্ধমানের আরও দু’জন পড়ুয়া রয়েছে । তারা হল মিউনিসিপাল হাই স্কুলের অঙ্কুর ঘোষ ও টাউন স্কুলের শৌণক দে। দশম স্থানাধীকারী শৌণক বন্দ্যোপাধ্যায় ও বর্ধমান সিএমএস হাই স্কুলেরই ছাত্র ।কৃতী এইসব ছাত্র ছাত্রীদের দৌলতেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বর্ধমানের জয়জয়কার পেয়েছে ।।