এইদিন ওয়েবডেস্ক,হরিশ্চন্দ্রপুর(মালদা),২১মে : মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর বিহার সীমান্তবর্তী সাদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের সহরাবহরা গ্রামের বাসিন্দা জনৈক এক তৃণমূল নেতার জায়গার সামনে ফুটপাতে ঝুপড়ি করে দীর্ঘ ৬০-৭০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে ২০ টি পরিবার । ফলে ওই তৃণমূল নেতার জায়গার সামনের অংশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল । তাই অবরোধ মুক্ত করতে বিহার পুলিশকে হাত করে রাতের অন্ধকারে ওই ঝুপড়ি ঘরগুলি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল গণেশ প্রামানিক ও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকারের বিরুদ্ধে ।
শুধু ঘর ভাঙাই নয়,ওই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে বিহার পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকজনের বিরুদ্ধে । বাদ যায়নি মহিলা ও শিশুও । এদিকে কালবৈশাখীর মরশুমে ঘরবাড়ি হারিয়ে গাছতলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে ওই সমস্ত অসহায় পরিবারগুলি । ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় । তবে ভাঙচুরকারীরা আদপেই বিহারের পুলিশ কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে । স্থানীয়দের একাংশের অনুমান, পুলিশের পোশাকের আড়ালে কোনো দুষ্কৃতীদল ওই ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত । এই বিষয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমাদের কিছু জানা ছিল না ।বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।’
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার সহরাবহরা মৌজা সাদলীচক গ্রাম-পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রাজ্য সড়কের ধারে কুড়িটি পরিবার প্রায় ৭০ বছর ধরে বসবাস করছে । পরিবারের সদস্যদের মূল পেশা জনমজুরি । ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য কালু দাস,চন্দনা দাসরা বলেন, ‘তৃণমূল নেতা গনেশ প্রামানিকের জমির সামনে সড়ক পথের পাশে ফুটপাতে আমাদের ঘর ছিল । আমাদের বাড়িগুলির জন্যই ওই তৃণমূল নেতার জায়গার সামনের অংশ অবরুদ্ধ হয়েছিল । গনেশ অনেক দিন থেকেই উঠে যাওয়ার জন্য বলছিল । আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম । তখন গনেশ আমাদের হুমকি দিয়েছিল কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারবো না । এখান থেকে চলে যা নচেৎ বিহার পুলিশকে দিয়ে তোদের হঠিয়ে দেবো । আর করলোও তাই ।’
তাঁরা জানান,শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশের পোশাক পড়ে বেশ কিছু লোকজন আসে । মহিলাও ছিল দলে । অধিকাংশ জনের হাতে বন্দুক ছিল । তারা এসে ২০ টি ঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে চলে যায় । চাল ডাল বের করার পর্যন্ত সময় দেয়নি । রাতে কালবোশেখীর ঝড়বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়েছে । এখনও পর্যন্ত কারোর খাবার জোটেনি ।
এদিকে এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব । শনিবার সকালে ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় যান উত্তর মালদার বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সাহায্যের আশ্বাস দেন । পরে বিকেলের দিকে তিনি হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় এসে আইসি সঞ্জয় কুমার দাসের সঙ্গে দীর্ঘক্ষন কথা বলেন । এই বিষয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা গনেশ প্রমাণিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি । তবে সাদলিচক গ্রাম-পঞ্চায়েতের প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকারের কথায়, ‘জায়গার সামনে অবরোধমুক্ত করার উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ । আসলে বিজেপি যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মানছে না সহরাবহরা গ্রামের ঘটনা তার প্রমাণ ।’।