এইদিন ওয়েবডেস্ক,পিয়ংইয়ং, ২০ মে : দেশজুড়ে করোনা মহামারীর আকার ধারন করলেও এখনও পর্যন্ত কোনো বিদেশি চিকিৎসা সহায়তা নিতে রাজি হয়নি উত্তর কোরিয়ার সরকার । পরিবর্তে করোনার সঙ্গে লড়াই করতে সনাতনী চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করার আহ্বান জানানো হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে । উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের পত্রিকা রডং সিমনান প্রচার করছে,যারা গুরুতর অসুস্থ নয়, তাদের আদা অথবা হানিসাকল (ঔষধি গুণসম্পন্ন পাতা ও ফুল) চা এবং ইউলো পাতার জল গরম জল পান করুন । এই ধরনের গরম পানীয় গলাব্যথা এবং কফের মতো করোনাভাইরাসের হালকা লক্ষণ থেকে আরাম দিতে পারে। এ ছাড়া শরীর থেকে বেশি জল বের হয়ে গেলে সেটির অভাবও পূরণ হয় । এছাড়া আদা ও ইউলো পাতা শরীরের প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে । বলা হচ্ছে লবণজল দিয়ে গার্গল করা সাধারণ ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা লাগা থেকে মুক্তি দিতে পারে । সেই কারনে রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ এক হাজার টন লবণ পাঠানো হয়েছে । উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সম্প্রতি এক দম্পতির সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যারা সকাল-বিকাল লবণজল দিয়ে গার্গল করার পরামর্শ দিয়েছেন ।
গত সপ্তাহে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কথা স্বীকার করেছিল একনায়ক কিম জন উনের প্রশাসন । উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া তখন জানিয়েছিল ‘একটি বিস্ফোরকভাবে ছড়িয়ে পড়া জ্বর’-এ ৫৬ জন মারা গেছে এবং ১৫ লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়েছে । তবে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার এর থেকে বহু গুণ বেশী । পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল । কিন্তু তা নিতে অস্বীকার করে একনায়ক কিম । এদিকে উত্তর কোরিয়ায় কোভিড পরীক্ষা করার মত পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই । নেই পর্যাপ্ত ওষুধও । ফলে মৃত্যুর হার বহু গুণ বেশি বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে । শুধুমাত্র কিমকে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাইয়ে দিতেই মৃত্যুকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম দেখানো হচ্ছে।
কোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ন্যাম সুং-উক (Nam Sung-wook) বলেছেন,’এক দশকের শাসনের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন কিম । তাই কিমের কর্তৃত্বকে রক্ষা করার জন্য মৃত্যুর হারকে কম করে দেখানো হচ্ছে ।’
প্রসঙ্গত,এপ্রিলের শেষের দিকে পিয়ংইয়ংয়ে একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছিল । কয়েক হাজার সৈন্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করেছিল । ইভেন্টের পরে প্যারেড অংশগ্রহণকারীদের সাথে কয়েক ডজন স্মারক গ্রুপ ফটো তুলতে বেশ কয়েক দিন কাটিয়েছিলেন কিম জন উন । তাদের কারোরই মুখে মাস্ক ছিল না । আর তার পর থেকেই উত্তর কোরিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে করোনার প্রকোপ । এখন ঘরোয়া টোটকা দিয়ে উত্তর কোরিয়া কিভাবে এই মহামারির মোকাবিলা করে সেটাই দেখার ।।