জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,১৫ মে : পরীক্ষা অফলাইন না অনলাইনে- এই ভাবনায় দিশেহারা রাজ্যের, কার্যত গোটা দেশের, বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের কয়েক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী। করোনা জনিত কারণে গত দু’বছর ধরে গোটা বিশ্বজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ । ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য পরীক্ষা হয়েছিল অনলাইনে। প্রসঙ্গত কয়েক বছর আগে সর্বভারতীয় স্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই রাজ্যেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে চালু হয়েছে ‘চয়েস বেসড সিস্টেম।’ পুরনো ধারায় বছরে একটি পরীক্ষার পরিবর্তে প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে দুটি করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মোটামুটি ছ’মাস নির্ধারিত থাকে প্রতিটি সেমিস্টারের জন্য। যদিও বাস্তবে পাঁচ মাসের মত সময় পাওয়া যায়।শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরাও নতুন নিয়মের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছিল। তারপরই ছন্দপতন। যাইহোক ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। করোনা আতঙ্ক দূরে সরিয়ে রেখে পুনরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হয়েছে ।
পঠনপাঠন স্বাভাবিক হতে না হতেই শুরু হতে চলেছে বা চলছে পরীক্ষা। ইন্টারন্যাল পরীক্ষা অফলাইনে হলেও সময়োজনিত কারণে সমস্যা হচ্ছে এক্সটারন্যাল পরীক্ষা নিয়ে । ছ’মাসের প্রস্তুতিটা আড়াই তিন মাসের মধ্যে মধ্যে শেষ করতে হবে এবং যেটা খুবই কঠিন ।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েরর অন্তর্গত কলেজগুলোতে মাত্র মাস তিন-চার আগে শেষ হয়েছে স্নাতক স্তরের পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা। পড়াশোনা শুরু করতে না করতেই অথবা সিলেবাস বোঝার আগেই স্নাতক স্তরে শুরু হয়ে গ্যাছে ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইনটারন্যাল পরীক্ষা। জুনের মাঝামাঝি হওয়ার কথা এক্সটারন্যাল পরীক্ষা । এতেই চাপে পড়ে গেছে ছাত্র ছাত্রীরা ।
একই পরিস্থিতি স্নাতকোত্তর স্তরে দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রীদের। জানা যাচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় সেমিস্টারের ‘ক্লাস’। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ইনটারন্যাল পরীক্ষা। কার্যত বিনা প্রস্তুতিতে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। তারা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এক্সটারন্যাল পরীক্ষা নিয়ে।
বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সেমিস্টার ও স্নাতকোত্তর স্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার দাবিতে ডিজিটাল মাধ্যমে সই সংগ্রহ শুরু হয়েছে। জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যে পৃথক পৃথক ভাবে কলকাতা ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দশ সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী নাকি এই দাবি পত্রে সই করেছে। পরে দাবি সম্বলিত পত্র নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি.সি-র হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাদের আশা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি.সি-রা অন্তত এই সেমিস্টারে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে তাদের অনুকূলে সিদ্ধান্ত নেবেন ।
কথা হচ্ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টারের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে। তাদের বক্তব্য- মাঝের দুটো বছর বাদ দিলে চোদ্দ বছরের ছাত্র জীবনে আমরা বারো বছর ক্লাসের বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিয়েছি। সুতরাং আমাদের মধ্যে পরীক্ষা ভীতি আছে বলে যারা রটনোর চেষ্টা করছে তাদের যোগ্যতা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ হয়। আমরা যখন কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম তখন করোনা ছিলনা। নির্দিষ্ট যোগ্যতা মান অর্জন করেই ভর্তি হয়েছিলাম। সুতরাং যোগ্যতার মাপকাঠিতে আমাদের নিশ্চয়ই খারাপ ‘স্টুডেণ্ট’ বলা যায়না? আমরাও চাই পরীক্ষা অফলাইনে হোক। কিন্তু পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আমাদের নুন্যতম সময়টা তো দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ ও স্নাতকোত্তর স্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হোক। যেহেতু ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর ছেড়ে দিয়েছে তাই ছাত্রছাত্রীরা আশাবাদী ।
যোগাযোগ করা হয়েছিল কয়েকজন কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের কথা বলেও তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। যোগাযোগ করতে না পারার জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতামত জানা যায়নি।।