এইদিন ওয়েবডেস্ক,নাইজেরিয়া,১৪ মে : ধর্ম নিন্দার অভিযোগ তুলে এক কলেজ ছাত্রীকে পিটিয়ে,পাথর ছুড়ে নৃশংসভাবে খুনের পর দেহ জ্বালিয়ে দিল কিছু ধর্মান্ধ জনতা । চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় । ডেবোরা স্যামুয়েল (Deborah Samuel) নামে ওই খ্রিস্টান ছাত্রীটি সোকোটোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শেহু শাগরি কলেজ অফ এডুকেশনের(Shehu Shagari College of Education) ছাত্রী ছিলেন । কলেজের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি কিছু মন্তব্য করেছিলেন । আর এই মন্তব্যকে ধর্মনিন্দার তকমা দিয়ে দেয় ইসলামিক মৌলবাদীরা । আর সেই অপরাধে তাঁকে নৃশংসভাবে খুনের পর দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ।
যদিও রিপোর্ট অনুযায়ী,কলেজের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ধর্মীয় বিষয়বস্তু পোস্ট করতে আপত্তি করেছিলেন ডেবোরা । তিনি একটি ভয়েস মেসেজে বলেছিলেন,’আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা সম্পর্কীয় বিষয়ের জন্য । ধর্মীয় বার্তা দেওয়ার জন্য নয় ।’ আর তাঁর এই মন্তব্যকে ইসলামপন্থীদের কাছে ‘ব্লাসফেমি’ বলে মনে হয়েছিল । যার ফলে ভয়ঙ্কর শাস্তি পেতে হল বছর বাইশের ওই পড়ুয়াকে।
ডেবোরা স্যামুয়েলকে খুনের একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইর্যাল হয়েছে । তাতে দেখা গেছে,গোলাপি রঙের পোশাক পরিহিতা ডেবোরা স্যামুয়েল মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন । আর তাঁকে লক্ষ্য করে ইঁট,পাথর, এমনকি গাড়ির টায়ার পর্যন্ত ছুড়ে মারছে কিছু উন্মত্ত মানুষ । পরে তাঁকে জ্বালিয়ে দিয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে খুনিরা । ঘটনার সময় পাশেই পুলিশবাহিনী ছিল । কিন্তু হামলাকারীর সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে এক অসহায় তরুনীর এই নৃশংস পরিনতি চোখের সামনে দেখতে তারা বাধ্য হয় পুলিশ । ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক কলেজ ছাত্রী দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন,’উন্মত্ত জনতা যখন ডেবোরাকে পাথর ছুঁড়ে ও লাঠি দিয়ে আক্রমণ করেছিল তখন পাশেই পুলিশ ছিল । কিন্তু পুলিশ বাঁচাতে আসেনি তাঁকে । তাকে খুনের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ।’ তবে ওই ছাত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি ।
উল্লেখ্য,নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বসবাস । উত্তরাঞ্চলে মুসলমানের আধিক্য বেশি । উত্তরাঞ্চলে ইসলামী শরিয়া আইন প্রচলিত আছে । তাই ডেবোরা স্যামুয়েলের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে না বলে মনে করছেন সেদেশের একাংশের মানুষ । কারন ইসলামে ধর্ম অবমাননার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এযা ২ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে । বাকিরা পলাতক । তাদের সন্ধান চলছে । এদিকে কলেজটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ।।