প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ মে : মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন নড়ে চড়ে বসলেও আপাতত খুলছে না বর্ধমানের মিস্টি হাব ।প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া সময়ে মিষ্টিহাবে মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসা সম্ভব নয় বলে বৃহস্পতিবার সাফ জানিয়ে দিলেন দোকানদাররা ।এদিন পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের সঙ্গেও দেখা করে মিষ্টি হাবের দোকানদাররা সেই কথা জানিয়ে দেন ।দোকানদারদের বক্তব্য,এখনও মিষ্টিহাব খোলার মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প
বর্ধমানের মিষ্টিহাব।রাজ্যের সব জেলার উৎকৃষ্ট মিষ্টি একই কেন্দ্রথেকে ক্রেতারা যাতে পেতে পারেন সেই লক্ষে তিনি মিষ্টিহাব তৈরীর ব্যাপারে উদোগী হন ।বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বর্ধমানের বাম চাঁদাইপুরে গড়ে ওঠে মিষ্টিহাব ।২০১৭ সালে আসানসোলে অনুষ্ঠিত বর্ধমান জেলা ভাগের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সেই মিষ্টি হাবের উদ্বোধন করেন ।কিন্তু চালু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই মিষ্টিহাব মুখ থুবড়ে পড়ে । দোকান পাট চালু হলেও জমেনি ব্যবসা।দিনের পর দিন ব্যবসা লোকসানে চলায় মিষ্টির হাবের দোকানগুলির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়।তারপরেও পূ্ব বর্ধমান জেলাপ্রশাসন মিষ্টিহাবকে সচল য়াখার চেষ্টা চালিয়ে যায় ।কিন্তু কোন দাওয়াই কাজে লাগে না । শেষমেস মিষ্টি হাবের নীচের তলার ১০টি ও দোতলার ১৫ টি দোকান ঘরে তালা পড়ে যায়।
মিষ্টিহাব বন্ধ হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টি যদিও
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আজানাই রেয়ে গেয়েছিল।
গত ২৮এপ্রিল রাজ্যের বিভিন্ন জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানের মিষ্টিহাব নিয়ে খোঁজ খবর নেন।তখনই মিষ্টি হাব ৪ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকার কথা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী হতাশ হন। পাশাপাশি ক্ষুব্ধও হন । এর পরেই তিনি মিষ্টি হাব পুনরায় চালুর জন্য জেলা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ পেয়ে জেলাশাসক
প্রিয়াংকা সিংলা গত ৬ মে তাঁর দপ্তরে বৈঠক ডাকেন ।সেই বৈঠকে জেলা শাসক ছাড়াও পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, বিধায়ক নিশীথ মালিক,জাতীয় সড়কের প্রতিনিধি,পরিবহন দপ্তরের আধিকারিক সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক এবং মিষ্টি হাবের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকেন । বৈঠকে স্থির হয় মিষ্টি হাবে সরকারি বাস দাঁড় করানোর হবে। পাশাপাশি ওই জায়গায় বাস থামাোর জন্য বেসরকারি বাস মালিকদের কাছে অনুরোধ করা হবে। জাতীয় সড়ক থেকে মিষ্টি হাবে বাস ঢোকার জন্য কাটিংয়ের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক। এইসব ব্যবস্থা চালু হলে মিষ্টিহাবে দোকান পুনরায় খুলবেন বলে ব্যবসায়ীরাও জানিয়ে ছিলেন।কিন্তু দোকানদারদের বক্তব্য অনুযায়ী এদিন ফের ক্ষীণ হয়ে গেল মিষ্টিহাবের দোকান পুণরায় খোলার বিষয়টি ।
দোকানদারেরা এদিন জানান, এর আগেও দুবার বাস দাঁড় করানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু জোর করে বাস দাঁড় করিয়েও যে খদ্দের হবে সেটা তাঁরা আশা করছেন না। দোকানদারদের অবিমত , এই মুহুর্তে মিষ্টি হাবে সেফ ল্যাব করা ও প্রিজার্ভ প্যাকেজিং এর উপর জোর দেওয়া উচিত। সীতাভোগ -মিহিদানায় আমরা জি আই পেয়েছি, এরপর ল্যাংচার উপর কিভাবে জি আই পাব তার পরিকল্পনা করে এক্সপোর্টের উপর আরও জোর দেওয়ার কাজটা এখান থেকে হলেই ভালো । এই মুহুর্তে যা পরিস্থিতি তাতে দোকান পুনরায় খুললে আবারও লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। জেলাশাসকের সাথে দেখা করে তাঁরা এদিন তাঁদের সেই অসুবিধার কথা গুলিই জানান।
দোকানদারদের পক্ষে প্রমোদকুমার সিং জানান; এভাবে দোকান চালাতে তারা অপারগ। আগের দিনে সবার সাথে কথা না বলেই তারা কথা দিয়েছিলেন। তারা এই দোকানগুলিকে সাজিয়ে অনেক চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু খদ্দের হয়নি।জোর করে দোকান খুলে বা বাস দাঁড় করিয়ে আগেও চেষ্টা হয়েছিল। তাদের পরামর্শ,এখানে মিষ্টি রপ্তানি ও গবেষণার কাজ হোক।তাতেই মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন সার্থক হবে। দোকান ফেরত দিয়ে দিতেও রাজি রয়েছেন বলে প্রমোদ সিং এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন ।অপর দোকানদার আশীষকুমার পাল জানান,তাঁরা এর আগে বিভিন্ন জেলার বিখ্যাত মিষ্টি বিক্রেতাদের এখানে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ওই জায়গাটি ফাঁকা এলাকা।অনেক খরচ করেও তারা সফল হন নি। তারা মনে করেন জাতীয় সড়কের কলকাতাগামী লেনে হাব হলে বিক্রি হতে পারত। এর আগেও বাস দাঁড় করিয়ে চেষ্টা হয়েছিল।কিন্তু বারবার লোকসান হয়েছে। এখনই দোকান খোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেই মনে করছেন তাঁরা। বিকল্প প্রস্তাব তাঁরা এদিন প্রশাসনকে দিয়েছেন। দোকানদারদের এই বক্তব্য থেকেই পরিস্কার হয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও মিষ্টিহাব নতুন করে খোলা আপাতত বিশ বাঁও জলে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলার পর ইতিমধ্যেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।এখন এই ব্যবসায়ীরা অপারগ হওয়ায় আমরাদের ভাবতে হবে।স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনা করে রূপরেখা তৈরি করা হবে ।।