জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,১১ মে : সম্ভবত এই প্রথম কোনো পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে একাধিক সম্পূর্ণ অভিনব দৃশ্যের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হলঘরে উপস্থিত শতাধিক কবি-সাহিত্যিক। সৌজন্যে ‘ভাষাসরিৎ’ সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠী। যেকোনো অনুষ্ঠানে সাধারণত সভাপতি, প্রধান অতিথি বা বিশেষ অতিথিরা মঞ্চ আলো করে বসে থাকার সুযোগ পান। বাকিরা থাকেন দর্শক আসনে। প্রচলিত রীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকেই মঞ্চে বসার সুযোগ পান।
১০ ই মে শিয়ালদহের কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ভবনে ছিল ‘ভাষাসরিৎ’ সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠীর পঁয়ত্রিশ-তম বছরের দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পত্রিকা গোষ্ঠীর সভাপতি সুনীতা হাজরা৷ বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রবীর কুমার চৌধুরী, কৃষ্ণা গুহ, মনতোষ বিশ্বাস প্রমুখ। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের গলায় উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। তারপরই ঘটে সেই অভিনব ঘটনা। সভাপতি সহ অন্যান্য অতিথিরা মঞ্চ ছেড়ে দর্শক আসনের আসন গ্রহন করেন এবং দর্শক আসনে বসে থাকা কবি-সাহিত্যিকরা, একসঙ্গে চারজন করে, মঞ্চে এসে বসেন। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মানপত্র ও মেমেণ্টো। তারা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। তারপর ফিরে যান দর্শক আসনে। এইভাবে উপস্থিত ভাষাসরিৎ সাহিত্য পত্রিকার ৮৪ জন কবি-সাহিত্যিক মঞ্চে আসেন। তাদের সম্মাননা প্রদান করা হয় এবং তারা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অন্তত কিছুক্ষণের জন্য মঞ্চে বসার সুযোগ পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি।
এর আগে গতানুগতিক উদ্বোধনী সঙ্গীতের পরিবর্তে প্রায় ত্রিশ বছর আগে পত্রিকা গোষ্ঠীর সম্পাদক নদেরচাঁদ হাজরা রচিত সংস্কৃত স্তোস্ত্র- “ওঁ স্থাপকায় চ সাহিত্যস্য বঙ্গসাহিত্য স্বরূপিণে/ অবতার বরিষ্ঠায় রবীন্দ্রানাথায় তে নমঃ// ওঁ নমঃ শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরায় নম নমাহঃ/”- পাঠের মধ্য দিয়ে অতিথিরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন এবং এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।
এই অনুষ্ঠানে নদেরচাঁদ হাজরা রচিত ৫০টি কবিতা সমৃদ্ধ শিশুপাঠ্য উপযোগী ছড়ার ছন্দের বই ‘মুক্তমালার হাট’ এবং ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বলের তরুণ জওয়ান মারুফ খানের ১৫৩ টি কবিতা সমৃদ্ধ ‘সভ্যতার বিবর্তনে’ বইটি প্রকাশিত হয়। পেশার তাগিদে এক হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্য হাতে কলম তুলে নিয়ে যেভাবে তিনি কবিতা সৃষ্টি করে চলেছেন সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
অনুষ্ঠানে পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক নদেরচাঁদ হাজরা, সহ সভাপতি মধুমিতা হালদার, সহঃ সম্পাদক মারুফ খান, পরিচালন সমিতির অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত, লিপিমিতা তনুশ্রী , আব্দুল জাব্বার, নুরুল হুদা খান সহ বিশিষ্ট শিক্ষক কবি অভিজিৎ দাস প্রমুখ। এদের প্রত্যেককেই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রবীণ কবি প্রবীর চৌধুরী কবিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও পেশায় শিক্ষিকা পত্রিকা গোষ্ঠী তথা অনুষ্ঠানের সভাপতি সুনীতা হাজরা সহ অনেকেই সাহিত্য আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এইভাবেই কেটে যায় পাঁচ ঘণ্টা দশ মিনিট। তাতেও উপস্থিত অতিথিদের মনে হচ্ছিল সময়টা বড্ড কম হয়েছে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সম্পাদক নদেরচাঁদ হাজরা। বাহ্যিক আড়ম্বর নয় আন্তরিকতাই ছিল অনুষ্ঠানের মূল মূলধন। এই মূলধনকে পাথেয় করে গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এই পত্রিকা গোষ্ঠী তাদের সাহিত্যচর্চা বজায় রেখেছে ।
অনুষ্ঠানে সুদূর বার্ণপুর থেকে এসেছিলেন কবি মুনমুন মুখার্জ্জী। তিনি বললেন – প্রত্যেককে মঞ্চে বসার সুযোগ করে দেওয়ার মধ্যে সত্যিই অভিনব ভাবনা আছে। হয়তো পরবর্তীকালে এই কনসেপ্টটা অন্যান্য সাহিত্য গোষ্ঠী কাজে লাগাবে। এতে প্রত্যেকেই সম্মানিত বোধ করেন। প্রসঙ্গত গত বইমেলায় মুনমুন দেবীর একাধিক একক কাব্যগ্রন্হ প্রকাশিত হয়েছে।
পেশায় শিক্ষক পত্রিকা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নদেরচাঁদ বাবু বললেন,’এরা প্রত্যেকেই আমাদের অতিথি এবং কবিতা দিয়ে আমাদের পত্রিকাকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। কবিতার জন্য তাদের কোনো সান্মানিক দিতে পারিনা। তাসত্ত্বেও তারা এই অনুষ্ঠানে ছুটে এসেছেন। তাদের জন্য এইটুকু করতে পেরে আমরা ধন্য ।’।