এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১০ মে : একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে ভিন ধর্মের যুবকের সঙ্গে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক । ধর্মের বিভেদ ভুলে প্রেমিকের সঙ্গে রেজিস্ট্রি ম্যারেজও করেছিলেন । কিন্তু বিয়ের এক মাসের মাথায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল বাংলাদেশের ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্রী অঙ্কন বিশ্বাসের । গত ২৪ এপ্রিল অঙ্গনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেছিল তাঁর স্বামী শাকিল আহমেদ ও এক দেবর । কিন্তু শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার । এদিকে বিয়ের মাসের মাথায় কেন তাকে জীবন দিতে হল এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না অঙ্কনের সহপাঠীরা। আতঙ্কে মুখ খুলতে রাজি হয়নি মৃত ছাত্রীর পরিবার । ভয়ে থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেননি মৃতার বাবা তপন কুমার বিশ্বাস । তিনি বলেন,’আমার আর্থিক বা শারীরিক সক্ষমতা নেই যে বিচার চেয়ে দৌড়াদৌড়ি করব । নিজের আরও একটা সন্তান রয়েছে । ছোট্ট একটা চাকরি করি । তা নিয়েই থাকতে চাই ।’যদিও অঙ্কনের মৃত্যুর পর থেকেই পলাতক শাকিল আহমেদ । এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অঙ্কন বিশ্বাসের সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনান্য শিক্ষার্থীরা । এই মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে তারা করে শাকিল আহমেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানাচ্ছেন ।
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বাসিন্দা
তপন কুমার বিশ্বাসের দুই সন্তানের মধ্যে বড় অঙ্কন । কর্মসুত্রে পুরানো ঢাকার স্বামীবাগ এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন তপনবাবু । নিহত ছাত্রী অঙ্কন বিশ্বাস অত্যন্ত মেধাবী বলে পরিচিত ছিলেন । স্নাতকে প্রথম বিভাগে প্রথম হন । ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতকোত্তর করছিলেন । অন্যদিকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র পলাতক শাকিল আহমেদ ।
অঙ্কন বিশ্বাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য এবং ক্যাম্পাসে নামকরা বিতার্কিক ছিলেন । বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি । আর সেই সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি শাকিলের সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অঙ্কনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানান, ধর্ম বিভেদ ভুলে অঙ্কন শাকিলের সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিলেন । নোটারি পাবলিক করে আদালতে তারা গোপনে বিয়েও করেছিল । কিন্তু ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় অঙ্কনকে ঘরে তুুলতে অস্বীকৃত হয় শাকিল । ইতিমধ্যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে । আর তারপর থেকেই সাকিল তার স্ত্রী অঙ্গনকে এড়িয়ে যেতে শুরু করে ।
অঙ্কনের অপর এক বন্ধু মুকিত চৌধুরী সানী জানান, গত ২৪ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে বেসরকারি আজগর আলী হাসপাতাল থেকে ‘অঙ্কন অসুস্থ’ বলে তাকে ফোন করে শাকিল। পরে সেখানে গিয়ে অঙ্কনকে জরুরি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পান তিনি। ঘটনা জানতে চাইলে শাকিল প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন; পরে দাবি করেন অঙ্কন নিজের বাড়ি থেকে হয়তো কিছু খেয়ে তার বাড়িতে এসেছিল । আর কথা বলার সময় সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
সানী জানান, পরিস্থিতি দেখে তিনি সেখান থেকে অঙ্কনের পরিবারকে ঘটনার কথা জানিয়ে দেন । পাশাপাশি অঙ্কনের অসুস্থতা নিয়ে তিনি চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাইলে বলা হয়, বিষক্রিয়ায় অঙ্কন হার্ট অ্যাটাক ও পরে ব্রেনস্ট্রোকের শিকার । ইতিমধ্যে অঙ্কনের আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে চলে আসেন । আর তখনই পালিয়ে যায় শাকিল ।
জানা গেছে,ঘটনার দিন সকালে শাকিলের বাড়িতে গিয়েছিল অঙ্কন । আর তার কিছুক্ষণ পরেই অঙ্কন অসুস্থ হয়ে পড়ে । শাকিল ও তার ছোট ভাই হিমেল পুরনো ঢাকার ওই বেসরকারি হাসপাতালে অঙ্কনকে নিয়ে যান। সেখানে শাকিল কখনও নিজেকে অঙ্কনের ভাই, কখনও বন্ধু পরিচয়ে ভর্তি করাতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে অস্বীকার করে । পরে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয় ওই ছাত্রীকে । গত ১ মে অঙ্কনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করেন তার বাবা । কিন্তু শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । মৃতার বাবা তপনবাবু জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের মৃত্যু স্বাভাবিক নয় । পাশাপাশি তিনি জানান, তিনি শাকিল নামে কাউকে চেনেন না এবং বিয়ের বিষয়েও কিছু জানতেন না ।
গেণ্ডারিয়া থানার ওসি আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অঙ্কনকে ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছিল । এরপর আর কেউ যোগাযোগ করেনি ।’ ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দায়ের হলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে তিনি জানান ।।