জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,০৯ মে : গত কয়েক বছর ধরে যে কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠী বাংলা সাহিত্যচর্চাকে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে তাদের অন্যতম হলো ‘আমরা দশভুজা’ সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠী । এই পত্রিকা গোষ্ঠীর উদ্যোগে এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রায় পঁচাত্তর জন কবি-সাহিত্যিকের উপস্থিতিতে গত ৮ ই মে সাহিত্যচর্চার পীঠস্থান কলকাতার রবীন্দ্র সদনের নন্দন চত্বরে ঐতিহ্যবাহী অবনীন্দ্র সভাগৃহে পত্রিকাটির বৈশাখী সংখ্যার মোড়ক উন্মোচিত হয়। শুধু স্বরচিত কবিতা পাঠ নয় বাঙালির আবেগ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনের পূর্ব দিনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে অনেক বাচিক শিল্পী রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠ করেন যেটা অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা এনে দেয় ।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী তথা পত্রিকা গোষ্ঠীর সভাপতি শ্রাবণী ঘোষ এবং সমাপ্তি সঙ্গীত পরিবেশন করেন আর এক বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুপ্রিয়া সরকার। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের শ্রুতি নাটক। সুনীল সরকার, মৌসুমী সাহা অভিনীত – আমি তুমি ইউটিউব এবং দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়দেব নস্কর ও শাশ্বতী দে অভিনীত- ছ’টা চল্লিশের ব্যান্ডেল লোকাল অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বৃদ্ধি করে। এটি রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী রঞ্জনা কর্মকার, দেবিকা ব্যানার্জী, সুতপা চক্রবর্তী, মুনমুন চক্রবর্তী সেন, সেবন্তী ঘোষ, শিপ্রা দাস জানা, ববি সরকার, মুনমুন মুখার্জ্জী প্রমুখের আবৃত্তি পাঠ শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। দমদম থেকে আগত পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বাচ্চা মেয়ে শ্রীতমা ঘোষ এবং কাঞ্চন কুমার দে ও মনোরোমা দে-র যৌথ আবৃত্তি পাঠ ছিল যথেষ্ট আকর্ষণীয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পত্রিকার সম্পাদিকা কৃষ্ণা চক্রবর্তী। চার ঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শুভাশীষ সরকার।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কবি অসীম দাস, পরাণ মাঝি, শ্রী সদ্যোজাত এবং সাংবাদিক পুলক বসু ও সৌগত রাণা কবিয়াল প্রমুখ। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে গলায় উত্তরীয় পড়িয়ে ও হাতে স্মারক তুলে দিয়ে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণা ভট্টাচার্য, শ্রাবণী ঘোষ, বিপ্লব ভট্টাচার্য, মন্দিরা মুখার্জ্জী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত,সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে সাহিত্যচর্চার উদ্দেশ্যে বছর চারেক আগে বাংলার মেয়ে তথা জামশেদপুরের গৃহবধূ কৃষ্ণা ভট্টাচার্য ‘আমরা দশভুজা’ সাহিত্য গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। পাশে পেয়েছিলেন একগুচ্ছ সাহিত্য প্রেমীদের। প্রথম থেকে এই গোষ্ঠী পুরোপুরি মহিলা কবিদের দ্বারা পরিচালিত ছিল। যদিও পরে বিপ্লব ভট্টাচার্যের মত কবিরা এই গোষ্ঠীতে যোগ দ্যান। সমাজ মাধ্যমে নিয়মিত কাব্য চর্চা ছাড়াও এই গোষ্ঠী বছরে দু’বার নবীন-প্রবীণ কবিদের সৃষ্টি সমৃদ্ধ বই প্রকাশ করে থাকে।
কৃষ্ণা ভট্টাচার্যের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে এই গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্যা তথা বিশিষ্ট কবি-বাচিক শিল্পী মন্দিরা মুখার্জ্জী বললেন – সাহিত্যের টানে যেভাবে কৃষ্ণা সুদূর জামশেদপুর থেকে এই বাংলায় বারবার ছুটে আসে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। ওর ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকা যায়না ।
উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথি, কবি, বাচিক শিল্পী প্রমুখদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কৃষ্ণা দেবী বলেন, ‘প্রবীণ কবিদের পাশাপাশি নবীন কবিদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমরা এই পত্রিকাগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছি। আশাকরি এই পত্রিকার হাত ধরে আগামী দিনে নতুন নতুন প্রতিভা উঠে আসবে ।’।