এইদিন ওয়েবডেস্ক,নেত্রকোনা(বাংলাদেশ),০৫ মে : গবাদি পশুর চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষের ছোটখাটো শারিরীক সমস্যার চিকিৎসা করতেন একজন পশু চিকিৎসক ৷ শখ হয়েছিল প্রসূতির বাড়িতেই তাঁর সিজার করবেন । আর তার সখের মাশুল গুনতে হল বছর ঊনিশের প্রসূতি আর তাঁর নবজাতককে । উপযুক্ত যন্ত্রপাতি,ওষুধপত্র এমনকি সেলাইন ছাড়াই সিজার করতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মৃত্যু হল প্রসূতির । অতিরিক্ত টানা হেঁচড়া সহ্য করতে না পেরে জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় নবজাতকেরও । বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের নেত্রকোনা উপজেলার বারহাট্টা থানার অন্তর্গত চন্দ্রপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় । ওই গ্রামেই বাড়ি নিহত প্রসূতি শরীফা আক্তার (১৯)-এর । একই উপজেলার জীবনপুর গ্রামে বাড়ি অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক আবুল কাশেমের । ঘটনা ঘিরে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় । যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এনিয়ে থানায় নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ।বারহাট্টা থানার ওসি লুৎফুল হক বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না । খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
নেত্রকোনার বারহাট্টার পশু চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক আবুল কাশেম । স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পশুর পাশাপাশি তিনি কিছুদিন ধরে মানুষের চিকিৎসাও করে আসছেন । চিকিৎসার ছাড়াও সক্রিয় রাজনীতিও করেন আবুল কাশেম । গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন । কিন্তু হেরে গেছেন তিনি । অন্যদিকে শরীফা বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছিলেন । গত বছর পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর এলাকায় তাঁর বিয়ে হয় মহসিন মিয়া নামে এক যুবকের সঙ্গে । সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে গত সপ্তাহে শরীফাকে চন্দ্রপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল ।
শরীফার মা মাফিয়া আক্তার খাতুন বলেন, ‘বুধবার সকালে শরীফার প্রসব ব্যথা শুরু হলে কাশেম ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয় । তিনি রোগীকে দেখে বললেন, সবকিছু স্বাভাবিক আছে কোন সমস্যা নাই । আমার মেয়েকে নেত্রকোনা হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু ডাক্তারের কথায় ভরসা পেয়ে আর নিয়ে যায়নি । তারপর তিনি আমাদের বাড়িতেই দুপুর দুটো নাগাদ আমার মেয়ের সিজার করেন ।’
শরীফার কাকা গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র-স্যালাইন ছাড়াই শরীফার সিজার করে ফেলেন আবুল কাশেম । পরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে একজনকে ওষুধ আনতে পাঠানো হয় মোহনগঞ্জে । অনেক দূরের পথ হওয়ায় ওষুধ নিয়ে আসতে দেরি হয় । কিন্তু তার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়। এদিকে টানা হেঁচড়া করতে গিয়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া পুত্র সন্তানেরও মৃত্যু হয় ।’
জানা গেছে,প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর পর উপস্থিত লোকজন ওই পশু চিকিৎসকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে । তার মধ্যে কয়েকজন গ্রামবাসী পশু চিকিৎসককে মারমুখী জনতার হাত থেকে বাঁচিয়ে বাড়ির পেছন দিয়ে পালানোর সুযোগ করে দেয় । এলাকাবাসীদের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ছাড়াই প্রসূতির বাড়িতে এসে সিজার করার ঘটনায় স্পষ্ট যে ওই চিকিৎসকের কোনো জ্ঞানই নেই । চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন প্রসূতির পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা ।
অন্যদিকে অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক আবুল কাশেমের দাবি ‘সিজারের পর ওষুধ আনতে পাঠানো হয়েছিল। দূরের পথ ওষুধ ও সেলাইন আনতে দেরি হওয়ার এ ঘটনা ঘটেছে। তবে শুধু পশু নয়,মানুষেরও চিকিৎসার শংসাপত্রও তার আছে বলে দাবি করেছেন।’ দীর্ঘদিন থেকে মানুষের চিকিৎসা করছেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু অপারেশনের আগেই কেন প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র জোগাড় করে রাখেননি ? এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত পশু চিকিৎসকের কাছ থেকে ।
মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহরিয়ার জাহান ওসমানি বলেন, ‘সিজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এটি এমবিবিএস ছাড়া কারো করার নিয়ম নেই । উনি(পশু চিকিৎসক) ঠিক কাজ করেননি ।’।