“কণ্টক দিয়া কণ্টক উদ্ধার করার ন্যায় ভাল সংস্কারের সাহায্যে মন্দ প্রবৃত্তিগুলির উচ্ছেদসাধন করিতে হয়। কিন্তু সুপ্রবৃত্তি, সংস্কার, হাজার ভাল হইলেও, তাহা সাধন পথের চরম লক্ষ্য লাভের অন্তরায়। হিন্দুদর্শন ভাল কর্ম এবং মন্দ কর্ম উভয়কেই বন্ধন বলিয়া পরিত্যাগ করিতে উপদেশ
দিয়াছে। কারণ হিন্দুদর্শনের উদ্দেশ্য সাধককে এমন এক অবস্থায় উপনীত করা যেখানে কোন অধীনতা বা কোন বদ্ধভাব নাই, যেখানে সাধক সর্ববন্ধনবিমুক্ত হইয়া পূর্ণ জ্ঞান, পূর্ণ আনন্দ লাভে কৃতকৃত্য হইয়া স্বীয় প্রকৃত স্বরূপ ভূমানন্দে অবস্থান করেন। তাই আমরা দেখিতে পাই, সংস্কাররূপ দ্রোণ কৌরবপক্ষ অবলম্বন করিয়া সাধকের সাধন পথের অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইয়াছেন। অবশেষে তাহার বিনাশ সাধনেই সাধক তাহার সাধন সমরে জয়ী হইয়াছেন। এক্ষণে এই তত্ত্বগুলি যখন পূর্ণরূপে সাধকের দেহে অভিব্যক্ত
হয়, তখন সাধক এক অনির্বচনীয় আনন্দময় অবস্থা অনুভব করেন। কিন্তু তখনও তিনি এই অবস্থাকে স্থায়ী করিতে পারেন না। সেই জন্য কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আরম্ভ ।
দুর্যোধনাদিরূপ সহস্র আসুরিক প্রবৃত্তিসমূহ সাধকের
সাধনপথে দণ্ডায়মান হইয়া তাহাকে প্রবৃত্তিমার্গে, ভােগের দিকে আকর্ষণ করিতে উদ্যত। সাধকদেহে পঞ্চতত্ত্বের অভিব্যক্তি, এই আসুরিক প্রবৃত্তিসমূহকে উচ্ছেদ করিয়া সাধক প্রবৃত্তিমার্গের ভােগলালসা পরিত্যাগপূর্বক, অবাধে অধ্যাত্মজীবনের নিবৃত্তিমার্গে চলিতে পারে তাহাই প্রদর্শন করিবার জন্য মহাভারতে গীতার আরম্ভ ।”
শ্রী শ্রী স্বামী যুক্তেশ্বর গিরি কর্তৃক প্রণীত “গীতার তত্ত্ব” থেকে সংগৃহীত ।