প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ মে : ইনসিওরেন্স ও ফিটনেসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া বহু সরকারী বাসে নির্দ্বিধায় চলছে যাত্রী পরিবহন । এমন অভিযোগ হামেশাই উঠে থাকে । তবে সেই অভিযোগ যে অমূলক নয় তার প্রমান ফের মিললো সোমবার পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে সরকারী যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পরেই । দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে মেমারি থানার পুলিশ দক্ষিনবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার (এসবিএসটিসি) ওই বাসটি আটক করার পাশাপাশি তার চালক সঞ্জিত কুমার পালকে গ্রেপ্তার করেছে । বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ মঙ্গলবার ধৃত বাস চালককে পেশ করে বর্ধমান আদালতে। বিচারক চালকের জামিন মঞ্জুর করলেও সরকারী বাসের এই দুরাবস্থার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব যদিও রাজ্যের পরিবহন দফতরকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,এসবিএসটিসির
যাত্রীবাহী বাসটি সোমবার সকালে কলকাতার করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে।বাসটির নম্বর প্লেটে পরিবহন দফতরের রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী যে নম্বর লেখা ছিল তা হল WB-39B-4590।বাসটি আসানসোল যাচ্ছিল । অভিযোগ,দ্রুত গতীতে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আসানসোল অভিমুখে যাবার সময়ে মেমারির কানাইডাঙা এলাকায় বাসটি প্রথম পাল্টি খায়। পরে সেখানকার ক্যানেলের ব্রিজ টপকে ঝুলতে থাকে সরকারী যাত্রীবাহী বাসটি। বরাত জোরে এই দুর্ঘটনায় বাসে থাকা জনা ৫০ যাত্রীর কারুর প্রাণহাণির ঘটনা না ঘটলেও ছয় জন যাত্রী সামান্য আহত হন । শুধুমাত্র মধ্যবয়স্কা এক মহিলা যাত্রী বেশী জখম হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় ।ক্রেনের সাহায্যে ঝুলন্ত বাসটি উদ্ধার করার পর মেমারি থানার পুলিশ বাসটি বাজেয়াপ্ত করে।পাশাপাশি বাসের চালককেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্তে নামে।
পুলিশ যখন দুর্ঘটনার তদন্তে ব্যস্ত সেই সময়ে মেমারির অনেক বাসিন্দা বাসটির হাল হকিকত জানতে সরকারী ’এম পরিবহন অ্যাপস’ খুলে বাসটির নম্বর দিয়ে সার্চ করা শুরু করেন।তখন প্রকাশ্যে আসে দুর্ঘটনাগ্রস্ত দক্ষিণববঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বাসটির ইনসিওরেন্স ফেল হয়ে গিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ।আর ফিটনেশের মেয়াদ প্রায় আড়াই বছর আগে শেষ হয়ে গিয়েছে । এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় পূর্ব বর্ধমান জেলা হয়ে চলাচল করা সরকারী বাসের যাত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক মহলে ।
বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশের কর্তারা কেউ কোন মন্তব্য করতে না চাইলেও সামালোচনা করতে চাড়েনি বিরোধীরা। জেলা বিজেপি নেতা কল্লোল নন্দন বলেন ,এই রাজ্যের তৃণমূল সরকার মেলা ,খেলা এই সবে টাকা পয়সা খরচ করতে যতটা আগ্রহী ততটাই অনাগ্রহী যথা সময়ে সরকারী বাসের ইনসিওরেন্স ও ফিটনেস সংক্রান্ত কাজ করাতে।শুধুমাত্র সরকারী ক্ষমতার বলে এই রাজ্যে নির্দ্বিধায় চলছে ইনসিওরেন্স ও ফিটনেসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে বাস। আর সেই সব বাসের দুর্ঘটনায় কোন যাত্রী মারা গেলে তার মাশুল ওই যাত্রী পরিবারকেই গুনতে হয়।
যদিও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডলের বক্তব্য, “সরকারী বাসের ইনসিওরেন্স ফেল হওয়ার কোন কারণ নেই। ফিটনেস সার্টিফিকেটও করিয়ে নেওয়া থাকে । সেই কারণেই কোন সরকারী বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়লে আদালতের নির্দেশ মত দুর্ঘটনাগ্রস্ত যাত্রী ইনসিওরেন্সের পাওয়া পেয়ে যান । কোন অসুবিধা হয় না । সুভাষবাবু এও দাবি করেন,হয়তো সরকারী অ্যাপে বাসটির ইনসিওরেন্স ও ফিটনেস সংক্রান্ত তথ্য আপলোড হয়নি । তবে হয়ে যাবে । এসবিএসটিসির চেয়ারম্যানের এই যুক্তি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতোন বলে মন্তব্য করেছেন
মেমারির বাম নেতৃত্ব ।।