দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০২ মে : ‘জীবে প্রেম করে যেই জন,সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ – স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী বাস্তবে প্রমাণ করে দেখালেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক মিসকিন মণ্ডল । এবারে রোজা রেখেছিলেন তিনি । আর আজকের দিনটা পার করে দিতে পারলেই সম্পূর্ণ হয়ে যেত দীর্ঘ এক মাসের কঠোর কৃচ্ছসাধনের ব্রত । কিন্তু এবারে তাঁর আর রোজা সম্পূর্ণ করা হল না । কারন ক্যান্সারে আক্রান্ত বছর সাতাত্তরের এক হিন্দু বৃদ্ধের প্রাণ বাঁচাতে রক্ত দিতে হল মিসকিনকে ৷ তাই ভাঙতে হল রোজা । ওই মুসলিম শিক্ষক ফের একবার প্রমাণ করে দিলেন সব কিছুর উর্দ্ধে মানবতা । মিসকিনের এই প্রকার মানসিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকার বাসিন্দারা ।
ভাতার থানার ঝুঝকোডাঙ্গা গ্রামে বাড়ি মিসকিন মণ্ডলের । বাড়িতে রয়েছেন বাবা,মা,ঠাকুমা । গ্রামেরই একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন বছর পঁচিশের মিসকিন । এলাকায় পরোপকারী বলে পরিচিত ওই শিক্ষক । লকডাউনের দীর্ঘ দু’মাস দুঃস্থ শিশুদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়েছে তিনি । এমনকি কচিকাঁচাদের পোশাক, বইখাতা পর্যন্ত তিনি নিজের খরচে কিনে দিয়েছেন । এছাড়া মূলত তাঁর উদ্যোগে প্রতিবছর গ্রামে ইদের পাশাপাশি সরস্বতী পূজোর আয়োজন করা হয় । তাই হিন্দু মুসলিম ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের প্রিয়পাত্র মিসকিন ।
মিসকিন বলেন, ‘এবারে আমি রোজা রেখেছিলাম । আর কয়েক ঘন্টা হলেই রোজা সম্পূর্ণ হত । সকালের দিকে নামাজের পর বাড়িতে বসে ফেসবুক দেখছিলাম । তখন নজরে পড়ে একটি পোস্ট । তা পড়ে জানতে পারি ভাতারের খেতিয়া গ্রামের বাসিন্দা ধীরেনচন্দ্র দত্ত নামে ক্যান্সার আক্রান্ত এক বৃদ্ধ বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি আছেন । ওনার রক্তের প্রয়োজন । রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজিটিভ । কিন্তু কোথাও রক্ত পাচ্ছিলেন না রোগীর পরিবার । পরিবারের কোনো এক সদস্য রক্তাদান করার জন্য কাতর আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে ওই পোস্টটি করেছিলেন । আমার রক্তের গ্রুপও ‘ও’ পজিটিভ । তাই আর থাকতে পারলাম না ।’
কিন্তু রোজা সম্পূর্ণ না হওয়ায় কি আফসোস রয়েছে মনে ? এই প্রশ্নের উত্তরে মিসকিন বলেন,’মানুষের জীবনের মূল্য একটা রোজার থেকে অনেক বেশি ।’ এরপর তিনি মুচকি হেঁসে বলেন, ‘আমার মত একজন অস্থির ছেলের রোজা সম্পূর্ণ করা বিশাল ব্যাপার । তাই এবারে ওপরওয়ালা হয়তো আমার জন্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন । আর হলও তাই ।’।