প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ এপ্রিল :
কালবৈশাখী তাণ্ডব শুরু করতেই এক কুমোর পরিবারের সবাই নিজেদের মাটির বাড়িটিকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভেবে ঠাঁই নিয়েছিলেন । কিন্তু সেখানে নিরাপদে থাকার পরিবর্তে উল্টে শুক্রবার রাতে জীবন সংশয় তৈরি হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার দক্ষিণশুড়া গ্রাম নিবাসী কৃষ্ণচন্দ্র পালের পরিবার সদস্যদের । কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটে তাঁদের মাটির বাড়ির উপরেই উল্টেপড়ে প্রতিবেশীদের প্রকাণ্ড একটি নারকেল গাছ।বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গেলেও ভয়াবহ এই ঘটনায় ওই কুমোর পরিবারের এক শিশু কন্যা সহ তিনজন আহত হয়েছেন।রাতে জামালপুর ব্লক হাসপাতালে আহতদের সবার চিকিৎসা হয়।
ঘটনার আতঙ্কে কার্যত দিশেহারা পরিবার সদস্যরা।
জামালপুরের চকদিঘী পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম দক্ষিণশুড়া।এই গ্রামের পাল পাড়ার বেশীরভাগ বাসিন্দাই পেশায় কুমোর । তাদেরই একজন হলেন দরিদ্র কৃষ্ণচন্দ্র পাল।মাটির দেওয়াল আর আ্যাজবেস্টার্স ও টালির চালার দু’কুঠরি ঘরে বসবাস করেন কৃষ্ণচন্দ্র বাবু ও তাঁর পরিবার সদস্যরা ।
এদিন কৃষ্ণচন্দ্র বাবু বলেন ,’শুক্রবার সন্ধ্যার পর আকাশ মেঘলা হয়ে যায়।এর খানিক পরেই কালবৈশাখী দাপট দেখানো শুরু করতেই এলাকায় কারেন্ট অফ হয়ে যায়। সাথে সাথে ঝোড়ো হাওয়া ও তার সঙ্গে বৃষ্টিপাতও শুরু হয়ে যায়। তা দেখে তিনি তাঁর পরিবারের সবাই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে নিজেদের মাটির বাড়িটিকেই বেছে নেন। ঝড় বৃষ্টি চলার সময়ে পরিবারের সবাই ঘরের ভিতরেই ছিলেন।সেই সময়ে তাঁদের মাটির বাড়ির উপরে আছড়ে পড়ে পাশের বাড়ির বাসিন্দা নিত্যানন্দ পালেদের একটি প্রকাণ্ড নারকেল গাছ’ ।কৃষ্ণচন্দ্র বাবু এও বলেন,’আস্ত নারকেল গাছ বাড়িতে উল্টে পড়ার পর বরাত জোরে তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ।তবে বাড়িতে থাকা এক শিশু সহ পরিবারের আরও দু’জন আহত হয়েছে ।’ বাড়িটিও একেবারে ভেঙে পড়ায় এখন কার্যত গৃহহীন হয়ে পড়েছেন বলে কৃষ্ণচন্দ্র বাবু জানিয়েছেন ।
কৃষ্ণচন্দ্র বাবুর স্ত্রী রানু পাল বলেন ,শুক্রবারের
আতঙ্কের রাতের কথা এখনও ভুলতে পারছি না।মাত্র দেড় মাস বয়সী নাতনি সহ আমরা পরিবারের সবাই ভাগ্যের জোরে নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বেচে গিয়েছি। জখম হয়ে নাতনি যে ভাবে আর্তনাদ করছিল তাতে মনে হয়েছিল ওকে হয়তো আর বাঁচানোই যাবে না। কিন্তু ভগবান রক্ষা করেছেন।তবে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু একেবারে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন এই গরম ও ঝড় বৃষ্টির দিনে ত্রিপল খাটিয়েই দিন কাটাতে হবে ।রানুদেবী আরও বলেন, “বিপদজনক অবস্থায় থাকা নারকেল গাছটি কেটে ফেলার জন্য প্রতিবেশী নিত্যানন্দ পাল কে একাধীক বার বলা হয়েছিল । কিন্তু তিনি কিছুতেই গাছ কাটতে চান নি।প্রকাণ্ড নারকেল গাছটা আমাদের বাড়ির উপরে উল্টে পড়লে ভয়ানক বিপদ ঘটে যাবে জেনেও নারকেল গাছ কাটার ব্যপারে নিত্যানন্দ পাল অনিহা দেখিয়ে যান । তার মাশুল এখন আমাদের গুনতে হবে“ ।
ঘটনার খবর পেয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এদিন সকালে কৃষ্ণচন্দ্র পালের বাড়িতে ছুটে যান।এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য পার্থপ্রতিম শেঠ এদিন বলেন ,’বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গিয়েছে পরিবারটি।তাদের বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । পঞ্চায়েত যাতে পরিবারটির পাশে দাঁড়ায় সেই ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন বলে পার্থপ্রতিম বাবু জানিয়েছেন ’। একই ভাবে পাশে থাকার ব্যাপারে পরিবারটিকে আশ্বস্ত করেছেন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ পাল । ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন ,“শনিবার সকালে আমরা ঘটনার কথা জানতে পারি।জেলা প্রশাসনকেও ঘটনা সবিস্তার জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো এই ব্যাপারে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।’।