এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ এপ্রিল : স্নাতক পাশ এক আদিবাসী তরুণীকে চাকরী দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠল রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী তথা ডেবরার বিধায়ক আইপিএস শিক্ষামন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে । শুধু তাইই নয়,মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা দাস কবীরের বিরুদ্ধে জাত তুলে গালাগালি দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বাসিন্দা সবিতা লায়েক নামে ওই তরুনী । ওই আদিবাসী তরুনীর এহেন অভিযোগ ঘিরে চরম বিপাকে পড়ে গেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । তবে মন্ত্রীর সাফাই,এর পিছনে বিরোধীদের চক্রান্ত কাজ করছে ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার ব্রাহ্মণশ্মশান গ্রামে বাড়ি সবিতা লায়েক নামে ওই আদিবাসী তরুনীর । তাঁর দাদু গুঁইরাম লায়েক ডেবরার ব্রাহ্মণশ্মশান পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। হতদরিদ্র পরিবার ৷ অতিকষ্টে পড়াশোনা করে স্নাতক পাশ করেছেন ওই তরুনী । সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, রাজ্যপাল ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জানান সবিতা । তাতে তিনি লিখেছেন, ‘গত বিধানসভা নির্বাচনে আমার দাদু গুঁইরাম লায়েক পঞ্চায়েতে ভালো কাজ করার জন্য এবং আমাদের পরিবারের অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থা দেখে গত ইংরাজী ১৫/০৫/২০২১ তারিখে ডেবরা বিধানসভার বিধায়ক ডঃ হুমায়ুন কবীর ওনার দপ্তর Technical Education & Skill Development-এ আমার চাকুরী (Appointed as an Altendent) দেন । আমার কাজে যোগদানের জন্য বিধায়ক কলকাতায় কসবায় তাঁর বাড়িতে যাওয়ার জন্য সুধাংশু সাহার মাধ্যমে আমায় ডেকে পাঠান । আমি ওনার বাড়িতে গেলে আমায় দিয়ে বাড়ী মোছা, জামা কাপড় কাচা থেকে শুরু করে কুকুরের পায়খানা পরিষ্কার করার কাজও করাতে শুরু করেন । আমি Appoinment letter চাইলে বিধায়ক বলতেন এখন আমার নাকি ট্রেনিং চলছে । তিন মাস পর Appoinment দেওয়া হবে । এইভাবে আমি টানা প্রায় আড়াই মাস ধরে ওনার বাড়ীতে ঝি চাকরাণীর এর কাজ করি । আমার বেতন প্রতিমাসে ‘Technical education & Skill Development থেকে আমার Bank Account – ১০ হাজার টাকা করে এ ঢুকে যেত ।
তাঁর অভিযোগ, প্রায় আড়াই মাস (৭৫ দিন) কাজ
এর পর বিধায়ক সাহেবের স্ত্রী অনিন্দিতা দাস কবীর আমায় একটি জামার বোতাম সেলাই করতে
বলেন । কিন্তু আমি তা না পারার বিধায়ক (ডঃ হুমায়ূন কবীর) ও উনার স্ত্রী (অনিন্দিতা দাস
কবীর) আমার ছোট লোকের বাচ্চা,ছোট জাতের মেয়ে, আদিবাসী, ইতর, অভদ্র” সহ এই গ্রনের জাত তুলে বহু অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে বাড়ী হতে জোর করে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে
দেন । আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী চলে আসি। এর কিছুদিন পর গত ইং-১০/০৮/২০২১ তারিখে আমার
বাড়ীতে চিঠি আসে আমি নাকি উক্ত সরকারী চাকুরী স্বেচ্ছায় ছেড়েছি ।
তিনি অভিযোগে লিখেছেন,আমি উক্ত ঘটনা মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ সুপার পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার,জেলাশাসক এনং সর্বশেষে রাজ্যপালকে চিঠি লিখে জানিয়েছি । এরপর গত বুধবার আমার বাড়ীতে ডেবরা থানার ওসি আসেন । উনি প্রথমে আমাকে ও আমার মা’কে ধমক দেন । যদিও পরে আমায় চাকুরীর প্রতিশ্রুতি দেন। আপনার নিকট আমার বিনীত নিবেদন আমার সাথে আমাদের ডেবরার বিধায়ক ডঃ হুমায়ূন কবীর চাকুরীর নাম করে যে প্রভাবনা করেছেন এবং আমায় জাত তুলে যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন, আমি একজন দরিদ্র উপজাতি মেয়ে হিসাবে তাঁর প্রতিকার চাই । আমি উক্ত ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ৩ (তিন) দিন এর মধ্যে আপনার নিকট ‘FIR’ এর আবেদন করছি । অন্যথায় আমি আত্মহত্য করতে বাধ্য হব ।’
যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের দাবি,’ওই মেয়েটি আমার ব্যক্তিগত সহায়ক (পিএ) হিসাবে ছিলেন । তাঁকে দিয়ে পরিচারিকার কাজ করানো হত না ।’ মেদিনীপুরে তাঁর কিছু ‘শত্রু’র চক্রান্তেই মেয়েটি এই কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন হুমায়ুন কবীর ।।