প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৬ এপ্রিল : গায়ের রং কালো হওয়ায় প্রতিনিয়ত স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের গঞ্জনা সহ্য করতে হত বধূকে।এমনকি সহ্য করতে হত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও ।শুধু মাত্র গায়ের রং কালো হওয়ার জন্য স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের এমন দুর্ব্যবহার মন থেকে মনে নিতে পারেন নি বধূ সরোজিনী ঘোষ (২৩)।তাই গঞ্জনা লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি পেতে তিনি চরম পরিণতির পথই বেছে নিলেন । সোমবার
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বড় ধামাস গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থকে উদ্ধার হয় বধূর ঝুলন্ত মৃত দেহ । ঘটনা কথা জেনে বিস্মিত মৃতার পরিজন ও এলাকাবাসী ।
মেয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে বধূর বাবার বাড়ির
লোকজন সোমবারই পূর্বস্থলী থানার দ্বারস্থ হন । তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বধূ নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেবার ধারায় মামলা রুজু করে বধূর স্বামী দেবার্ঘ ঘোষ ও শ্বশুর বাবলু ঘোষ কে গ্রেপ্তার করে । ময়নাতদন্তে পাঠানো হয় বধূর মৃতদেহ ।পুলিশ মঙ্গলবার ধৃতদের পেশ করা হয় কালনা মহকুমা আদালতে । বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,বধূ
সরোজিনী ঘোষের বাবার বাড়ি হুগলী জেলার ভদ্রেশ্বরের। পূর্বস্থলীর বড় ধামাস গ্রাম নিবাসী
যুবক দেবার্ঘ ঘোষের সঙ্গে তাঁর ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে । বছর চারেক আগে তাঁদের বিয়ে হয় । দম্পতির আড়াই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে । বধূর পিসেমসাই সুকুমার দাস অভিযোগে জানিয়েছেন,ফেসবুকের মাধ্যমেই সরোজিনীর সঙ্গে পরিচয় হয় দেবার্ঘর । পরে ওদের দু’জনের মধ্যে প্রেম ভালবাসা গড়ে উঠলে বিয়ে হয় । আর বিয়ের পর থেকেই গায়ের রং কালো বলে সরোজিনীকে খোঁটা দেওয়া শুরু করে তাঁর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন । তাঁকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার পাশাপাশি শুরু হয় গঞ্জনা ও লাঞ্ছনা ।এমনকি জামাই ও তাঁর পরিবারের অন্য সরোজিনীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও চালাতো। দিন কুড়ি যাবৎ নির্যাতনের মাত্রা বাড়ায় বাবা স্বপন মণ্ডল তার মেয়ে সরোজিনীকে ভদ্রেশ্বরে বাবার বাড়ি নিয়ে চলে যান ।
অভিযোগ,এরপর দিন ১০-১২ আগে সরোজিনীর শ্বশুর বাবলু ঘোষ নিজে বধূর বাবার বাড়িতে পৌছান ।আর অশান্তি হবে না ,গঞ্জনা-চাঞ্ছনা করা হবে না এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাবলু ঘোষ তাঁর পূর্বস্থলীর বাড়িতে নিয়ে যান সরোজিনী কে । কিন্তু সরোজিনীর ভাগ্যে আর সুখ ফেরে না । বধূর বাবা স্বপন মন্ডল বলেন,“ গায়ের রং কালো বলে তাঁর মেয়েকে একই ভাবে খোঁটা দেওয়া থেকে শুরু করে গঞ্জনা- লাঞ্ছনা সমান ভাবে চালিয়ে যায় জামাই ও তাঁর বাড়ির লোকজন। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের ওই দুর্ব্যবহার মন থেকে আর মনে নিতে না পেরে সরোজিনী চরম পরিণতির পথ বেছে নেয় । সোমবার গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝোলা অবস্থায় শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় মেয়ের মৃতদেহ“। স্বপন মণ্ডল দাবী করেন ,তাঁর মৃত্যুর জন্য জামাই ও তার পরিবারের লোকজনই দায়ী । তাঁরাই সরোজিনীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে। বধূর বাবা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ।।