🌼 চিত্তশুদ্ধি না হলে হয় না । কামিনী-কাঞ্চনে মন মলিন হয়ে আছে, মনে ময়লা পড়ে আছে। ছুঁচ কাদা দিয়ে ঢাকা থাকলে চুম্বকে আর টানে না । মাটি কাদা ধুয়ে ফেললে তখন চুম্বকে টানে । মনের ময়লা তেমনি
চোখের জলে ধুয়ে ফেলা যায় । “হে ঈশ্বর আর অমন কাজ করবাে না’ বলে যদি কেউ অনুতাপে কাঁদে, তা’হলে ময়লাটা ধুয়ে যায় । তখন ঈশ্বররূপ চুম্বক
পাথর মনরূপ ছুঁচকে টেনে লয় । তখন সমাধি হয়, ঈশ্বর দর্শন হয় ।
কিন্তু হাজার চেষ্টা কর তাঁর কৃপা না হলে কিছু হয় না। তাঁর কৃপা না হলে তাঁর দর্শন হয় না । কৃপা কি সহজে হয় ? অহংকার একেবারে ত্যাগ
করতে হবে। আমি কর্তা এ বােধ থাকলে ঈশ্বর দর্শন হয় না । ভাঁড়ারে একজন আছে, তখন বাড়ীর কর্তাকে যদি কেউ বলে মহাশয় আপনি এসে জিনিস
বার করে দিন । তখন কর্তাটি বলে, ভাঁড়ারে একজন রয়েছে আমি আর গিয়ে কি করবাে । যে নিজে কর্তা হয়ে বসেছে তার হৃদয়মধ্যে ঈশ্বর সহজে আসেন না। কৃপা হলেই দর্শন হয় দ। তিনি জ্ঞানসূর্য । তার একটি কিরণে এই জগতে জ্ঞানের আলাে পড়েছে, তবেই আমরা পরস্পরকে জানতে পারছি, আর
জগতের কত রকম বিদ্যা উপার্জন করছি । তার আলাে যদি একবার তিনি নিজে তার মুখের উপর ধরেন, তাহলে দর্শন লাভ হয় । সার্জন সাহেব রাত্রে
আঁধারে লন্ঠন হাতে করে বেড়ায় ; তার মুখ কেউ দেখতে পায় না । কিন্তু ঐ আলােতে সে সকলের মুখ দেখতে পায় ; আর সকলে পরস্পরের মুখ দেখতে
পায় ।
যদি কেউ সার্জনকে দেখতে চায়, তা হলে তাকে প্রার্থনা করতে হয় । বলতে হয়,সাহেব কৃপা করে একবার আলােটি নিজের মুখের উপর ফিরাও,
তােমাকে একবার দেখি ।
ঈশ্বরকে প্রার্থনা করতে হয়, ঠাকুর কৃপা করে জ্ঞানের আলাে তােমার নিজের উপর একবার ধর, আমি তােমায় দর্শন করি ।
ঘরে যদি আলাে না জলে, সেটি দারিদ্র্যের চিহ্ন। তাই হৃদয় মধ্যে জ্ঞানের আলাে জ্বালাতে হয় । ‘জ্ঞানদীপ জেলে ঘরে, ব্রহ্মময়ীর মুখ দেখ না ।’
কথামৃত- ১/৪/৭