আজ রবিবার কিন্তু কলেজ যেতেই হবে প্রতিবছরের মতো এ বছরও আজ ‘সেট’ পরীক্ষা হচ্ছে I পরীক্ষায় গার্ড দেওয়ার জন্য কলেজে যেতে বলেছে প্রিন্সিপাল I দুবছর হলো নীলাদ্রি চন্দননগর গভর্নমেন্ট কলেজ অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছে I নীলাদ্রি ভেবেছিল পুজোর ছুটিতে এবার গ্যাংটক যাবে কিন্তু ভূমিকম্প সব প্ল্যান ওলট পালটকরে দিল I
আজ আবার একটা ভূমিকম্প ওলট পালট করে দিল নীলাদ্রির জীবনকে I সেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও যাবতীয় কাগজ নিয়ে তার সহকর্মী প্রিয়াংশুর সঙ্গে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করল নীলাদ্রি I পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র দেওয়ার পর নীলাদ্রি প্রিয়াংশুকে বলল একটু দেখ আমি বাইরে থেকে আসছি I নীলাদ্রি ব্যালকনিতে এসে একটা সিগারেট ধরায় I দশ মিনিট পর নীলাদ্রি উত্তরপত্র এ সই করতে করতে একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছায় I প্রতিবারের মতোই পরীক্ষার্থীদের খাতাতে সই করার সময়ে পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড এর রোল নাম্বার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় গুলি দেখে নীলাদ্রি সই করেI এডমিট কার্ড নিয়ে ছবি দেখে চেনা চেনা লাগে, নাম দেখ নীলাদ্রি আরও কনফার্ম হয় I বর্ষা মুখোপাধ্যায়. মুখের দিকে তাকাতে নীলাদ্রি চিনতে পারে, কিছু না বলে সই করে চলে আসেIবর্ষা হয়তো চিনতে পারে এই কথা ভাবতে ভাবতে নীলাদ্রি প্রিয়াংশুকে বলে ভাই আমি পাশের ঘরে গার্ড দিচ্ছি আর অমলদা কে এই রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি একটু ম্যানেজ করে নিসIএই বলে পাশের রুমে চলে যায় নীলাদ্রি. কারণ সে মনে মনে অনুভব করে তার উপস্থিতি পরীক্ষার্থী হিসাবে বর্ষার যদি কোনো অসুবিধা হয়, যদি সে আনমনা হয়ে যায়, ফলে পরীক্ষা যদি ভালো না হয়? তাই না থাকাই ভালো!
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সেই দিনগুলো নীলাদ্রি চোখে ভেসে উঠে.. শ্যামলা রং এর বর্ষার প্রতি দুর্বলতা, কাছে আসা লিভটুগেদার, লুকিয়ে বাড়িতে না জানিয়ে রেজিস্ট্রি, আবার হঠাৎ করে বহু দূরে চলে যাওয়া I আজ আট বছর পরেও নীলাদ্রির জীবনে সেই সব স্মৃতি সবই যেন সতেজI নীলাদ্রির শুনেছিল বর্ষা গলসির কোন এক হাইস্কুলে চাকরি পেয়েছেI
পরীক্ষা শেষ হতেই অ্যানসার শীট নিয়ে সবকিছু মিলিয়ে, গোছগাছ করে স্টাফ রুমে আসতে বেশ খানিকটা সময় গড়িয়ে যায়I নীলাদ্রি এসে দেখে বর্ষা দাঁড়িয়ে আছে. বর্ষা এগিয়ে এসে বলে নীলাদ্রি কেমন আছো?
নীলাদ্রি.. ভালো…তুমি কেমন আছো?
বর্ষা বলে ভালো….
নীলাদ্রি বর্ষা কে বলে এক টু অপেক্ষা করো,প্রিন্সিপালকে উত্তরপত্র গুলি জমা দিয়ে আমি আসছিI তোমার কোন অসুবিধা নেই তো?
বর্ষা বলে না না আজ আমি চন্দননগরে থাকবোI
খাতা জমা দিয়ে বর্ষা ও নীলাদ্রি কথা বলতে বলতে গঙ্গার ঘাটে এসে বসেI
নীলাদ্রি বলে তা তুমি চন্দননগরে পরীক্ষা দিতে এসছো! বর্ধমান এ তো দিতে পারতে.Iআসলে এখানে মানে চন্দননগরে দিদি জামাইবাবু থাকে মা ও বেশ কিছু দিন আগে আমার কাছ থেকে এখানে এসে আছে তাই আর কিI
বর্ষা বলে তা তুমি এখানে!
নীলাদ্রি বলে.. চন্দননগরে দুবছর হলো জয়েন করেছি
খুব ভালো তুমি কথা রাখলে এ ই বলে বর্ষা তাকায়
নিলাদ্রি বলে.. ..বড্ড বেশি দেরি হয়ে গেল…
বর্ষা প্রশ্ন করল 36?
হলো হয়তো! নীলাদ্রি বলে তোমার?
বর্ষা বলে তোমার থেকে এক ক্লাস নিচে..
বর্ষা জিজ্ঞেস করে পরীক্ষার হল থেকে চলে গেলে কেন? নীলাদ্রি বলে তুমি যদি অন্যমনস্ক হয়ে পড়, পরীক্ষার যদি কোনো ব্যাঘাত ঘটেI
দুজনে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে তুমি কি গলসিতেই আছো? বর্ষা বলল তুমি কি করে জানলে!
আমি শুনেছিলাম I
বর্ষা বলে হ্যাঁ কাল ফিরে যাবো এক সপ্তাহ হলো এখানে আছি,কাল স্কুলে জয়েন করবI
কাল চলে যাবে বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে?
বর্ষা বলে যেতে হবে সোমবার থেকে রুমকির ক্লাস টু এর ইউনিট টেস্টI
নীলাদ্রি বলে রুমকি!
বর্ষা বলে আমার মেয়ে.
নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে বিয়ে করলে কখন?
বর্ষা বলে বিয়ে করিনি…
প্রশ্ন করে নীলাদ্রি তবে!….
তুমি যখন ডিভোর্স দিয়েছিলে তখন রুমকি আমার পেটে…
এ কথা তোমাকে আমি জানায় নি, মানে জানালে বা কি হতো?
মানে! নীলাদ্রি বর্ষার দিকে বিস্ময়ে তাকাল!!!
রুমকি তোমার মেয়ে, তোমার অংশ…..
হঠাৎ করে একটা নিস্তব্ধতা নেমে এলো আকাশ জুড়ে… একটা স্টিমার সাইরেন বাজাতে বাজাতে চলে গেলে গঙ্গার ওপারে………