শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারী(পূর্ব বর্ধমান),১১ এপ্রিল : নদীমাতৃক দেশ ভারত । বিভিন্ন নদীর পাশেই গড়ে উঠেছে বড়বড় জনপদ । বহু প্রাচীন কাহিনী রয়েছে বিভিন্ন নদীকে কেন্দ্র করে । তেমনি একটি নদী হল পশ্চিমবঙ্গের বেহুলা নদী । মধ্য যুগে এই নদীকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল বিখ্যাত মনসামঙ্গল কাব্য । কিন্তু সরকারি উদাসীনতায় আজ নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বেহুলা । সংস্কার না হওয়ায় মজে গিয়ে দূষণ ছড়াচ্ছে । কচুরি পানায় ভর্তি নদীর পচাজল আজ মশা,মাছির আঁতুরঘরে পরিনত হয়েছে । আর তার জেরে অতিষ্ট আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা । ফলে বাড়ছে ক্ষোভ । উঠছে অবিলম্বে সংস্কারের দাবি ।
মহানন্দা নদীর শাখা নদী বেহুলা । পুরাতন মালদা ব্লকের প্রায় ৩০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই নদীটি। বর্ধমান জেলার দক্ষিন পূর্বাংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলি জেলায় ভাগিরথীতে গিয়ে মিশেছে বেহুলা । সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ক্ষেমানন্দের রচিত মনসা মঙ্গলে বেহুলার নিরুদ্দেশ যাত্রা এবং পরে চৌদ্দ ডিঙাসহ চাম্পাইতে প্রত্যাবর্তনের বর্ননার সময় ওঝাটি,গোবিন্দপুর,বর্ধমান,গাংপুর,নেয়াদা, আমদপুর,হাসানহাটি,নারিকেলডাঙ্গা,বৈদ্যপুর প্রভৃতি এলাকার উল্লেখ পাওয়া যায় ।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারী-২ ব্লকের পাহাড়হাটি,গান্টে , কানপুর,মধুপুর,কাপাসটিকরেসহ ৮-১০ টি গ্ৰামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই ঐতিহাসিক নদীটি । কিন্তু মজে যাওয়ার কারনে আজ বেহুলাকে চেনা দায় হয়ে পড়েছে । গোটা নদী জুড়ে শুধু কচুরি পানায় ভর্তি ।
গান্টের বাসিন্দা শেখ রহিম বলেন,’দীর্ঘদিন ধরে বেহুলা নদীর সংস্কার হয়নি । পানায় বুজে গেছে । নদীর জল পচে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে । মশা,মাছির উপদ্রবে টেকা মুশকিল হয়ে পড়েছে পারহাটি, গান্টেসহ ৮-১০ টি গ্রামের বাসিন্দাদের । আগে আমরা নদীর জল স্নান ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করতাম । গবাদি পশুদের স্নান করানো হত নদীর জলে । কিন্তু জল পচে যাওয়ায় আর ব্যবহার করা যায় না ।’ তাঁর অভিযোগ,’নদীর পাশেই বিডিও অফিস, পঞ্চায়েত অফিস । বিডিও ও প্রধান প্রতিনিয়ত বিষয়টি দেখছেন । অথচ কেন যে তাঁরা নদী সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছেন না জানিনা ।’
পারহাটি গ্রামের বাসিন্দা স্বরূপ মণ্ডল, অশীতিপর রামচন্দ্র ঘোষরা বলেন, ‘আশপাশের ৮-১০ গ্রামের মানুষ স্নান,গৃহস্থালি কাজ এবং কৃষিকাজে বেহুলা নদীর জল ব্যবহার করত । কিন্তু বিগত ২০১৮ সাল থেকে নদীর কোনো সংস্কার করা হয়নি । ফলে মজে যাওয়ায় নদী লাগোয়া বসবাসকারী মানুষদের বসবাস করা কঠিন হয়ে গেছে । মশার প্রচুর উৎপাত বেড়ে গেছে । মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে । এখন মনে হচ্ছে নদীটা না থাকলেই ভালো হত ।’
তাঁরা আরও বলেন, ‘আগে এন আর জি এসের আওতায় নদী সংস্কারের কাজ হত । কিন্তু বছর চারেক ধরে সব বন্ধ হয়ে গেছে । গোটা নদী আজ পানায় ভর্তি । নদী সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েত, প্রশাসন সব জায়গায় গিয়ে তদ্বির করেছিলাম আমরা । কিন্তু তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন । নদী সংস্কারের কোনও উদ্যোগই নিচ্ছেন না ।’
এই বিষয়ে মেমারী ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মামনি মুর্মু জানিয়েছেন,নদী সংস্কার করার মত আর্থিক সঙ্গতি ব্লকের নেই । বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে । জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহঃ ইসমাইল জানিয়েছেন,সেচ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে নদী সংস্কারের বিষয়ে তিনি উদ্যোগী হবেন ।।