এইদিন ওয়েবডেস্ক,লন্ডন,০৯ এপ্রিল : প্রতিটি মানুষই চায় আমৃত্যু তরুন বা তরুনী হয়ে থাকতে । কিন্তু বাস্তবে তা কি সম্ভব ? বয়স বাড়তেই ত্বকে ভাঁজ, চুল সাদা হতে শুরু করে । চুলে কলপ লাগিয়ে তবুও সাময়িক কালো করা যায় । কিন্তু ত্বকের ভাঁজ তো প্রকাশ করে দেয় আসল বয়স । আর তখন থেকেই বয়স লুকিয়ে রাখার প্রবনতা জন্মে মানুষের মধ্যে । আর এই প্রবনতা মহিলাদের মধ্যে সব থেকে বেশি । সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে সিংহভাগ মহিলার বয়সের স্থানে মাস ও দিন উল্লেখ থাকলেও সালের উল্লেখ থাকে না । এবার বিশেষ করে মহিলারের জন্য একটা ভালো খবর পাওয়া গেছে লন্ডনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ক্যামব্রিজের একদল গবেষক এমন একটি কৌশল আবিষ্কার করেছেন যাতে ৫০ বছরে প্রৌঢ়া মহিলার ত্বক ২০ বছরের তরুনীর মত তরতাজা থাকবে । আর বাস্তবিক তা করেও দেখিয়েছেন গবেষকরা । সম্প্রতি তাঁরা ৫৩ বছর বয়সি এক মহিলার দেহের চামড়ার কোষগুলোকে ২৩ বছরের তরুণীর মতো পুনরুজ্জীবিত করে দিয়েছেন ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কি সেই বিস্ময়কর কৌশল । এই বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ক্যামব্রিজের বাব্রাহাম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক উলফ রেইক একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে চামড়ার কোষ পুনরুজ্জীবনে ডলি ক্লোন করা ভেড়া তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছিল এই বিশেষ প্রযুক্তি বা কৌশল । তখনই আশা করা হয়েছিল যে এই কৌশলটি মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য দীর্ঘকাল ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে । আর তার পরেই শুরু হয় কৌশলটি মানুষের উপর ব্যবহারিক প্রয়োগ ।’
প্রসঙ্গত,কোষের পুনরুজ্জীবনের কৌশলটির উৎপত্তি ১৯৯০-এর দশকে। ওই সময় এডিনবার্গের রোজলিন ইনস্টিটিউটের গবেষকরা একটি ভেড়া থেকে নেওয়া গ্রন্থি কোষকে ভ্রূণে পরিণত করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন । পরবর্তীতে এই পরীক্ষার মাধ্যমে ডলি ক্লোন ভেড়া তৈরি হয়েছিল । কিন্তু ভেড়া বা প্রকৃতপক্ষে মানুষের ক্লোন তৈরি করা রোজলিনের গবেষক দলের লক্ষ্য ছিল না । তাদের লক্ষ্য ছিল মানব ভ্রূণের স্টেম সেল তৈরি করার জন্য কৌশলটিকে ব্যবহার করা ।
এর মাধ্যমে তাঁরা মানব শরীরের রুগ্ন বা বয়স জনিত ভাঁজ পড়া অংশগুলোকে প্রতিস্থাপন করার জন্য পেশি, তরুণাস্থি এবং স্নায়ু কোষের মতো নির্দিষ্ট কোষ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন । ২০০৬ সালে ডলি কৌশলটি আরও সহজ করেন তৎকালীন কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিনিয়া ইয়ামানাকা ।
আইপিএস নামে পরিচিত নতুন পদ্ধতিটিতে প্রায় ৫০ দিনের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক কোষগুলোতে রাসায়নিক যুক্ত করা হতো । এর ফলে যে জিনগত পরিবর্তন হয় তাতে প্রাপ্তবয়স্ক কোষকে স্টেম কোষে পরিণত করা সহজ হয় ।
কেমব্রিজের বাব্রাহাম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক উলফ রেইকের পরিচালনায় ওই গবেষক দলটি এক ৫৩ বছর বয়সি মহিলার ত্বকের কোষগুলোতে আইপিএস কৌশল ব্যবহার করেছে। কিন্তু তারা রাসায়নিক স্নান বা সংশ্লেষের মেয়াদ ৫০ দিন থেকে প্রায় ১২ দিনে নামিয়ে নিয়ে আসেন । গবেষকরা অবাক হয়ে দেখেন যে ত্বকের কোষগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং এগুলো দেখতে ২৩ বছরের তরুণের মতো । এই আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে নতুন এক দিগন্ত খুলে দিলেন লন্ডনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ।।