প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৬ এপ্রিল : খুনের বাদলা নিতে বগটুইয়ের কায়দায় খুনি ও তাঁর পরিজনদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত গ্রামবাসীরা।সোমবার বিকালে পূর্ব বর্ধমানের গলসির সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দারা এমন ঘটনা ঘটানোর পরেই পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় অভিযানে নামে । পুলিশ ৩৯ জনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে এখন কার্যত পুরুষ শূণ্য রামগোপালপুর পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর গ্রাম । আর তাতেই বিপাকে পড়ে গিয়েছেন উৎপল ঘোষ (৩৩) এর স্ত্রী সাধনা ঘোষ ও তাঁর পরিবার । কারণ গ্রামে এখন নাপিত , ব্রাহ্মণ কেউ নেই ।স্বামীর পরলৌকিক কাজ সম্পাদনের জন্য ক্ষৌরকর্ম পর্যন্ত তাঁরা করতে পারছেন না । এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য বুধবার পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাধনাদেবী । পাশাপাশি তিনি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার সিবিআই তদন্তও দাবি করেছেন ।
কৃষি প্রধান গলসির সন্তোষপুর গ্রাম হঠাৎ করে এই ভাবে খবরের শিরণা জায়গা করে নেওয়ার নেপথ্য কারণটাও যথেষ্ট শিহরণ জাগানো। স্ত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করেছিলেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা উৎপল ঘোষ (৩৩)। শুধু প্রতিবাদ করাই নয় , স্ত্রীকে উত্যক্ত করার ঘটনায় জড়িত প্রতিবেশী মনোজ ঘোষের বিরুদ্ধে তিনি গলসি থানায় অভিযোগও জানিয়ে ছিলেন । তারই বদলা নিতে রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে উৎপল ঘোষকে নৃশংস ভাবে খুন করে মনোজ ঘোষ ।
রাতে মাথায় কুড়ুল গেঁথে থাকা অবস্থায় এলাকার একটি পুকুর পাড় থেকে উদ্ধার হয় উৎপলের মৃতদেহ । মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনার তদন্তে নেমে গলসি থানার পুলিশ ওই রাতেই মনোজ কে আটোক করে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ।উৎপলকে নৃশংস ভাবে খুন করার কথা জেরায় মনোজ পুলিশের কাছে স্বীকারও করে নেয় ।পুলিশ মনোজ ঘোষকে গ্রেপ্তারের পর সেমবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে তদন্তের প্রয়োজনে ৪ দিন পুলিশি হেপাজতে নিয়েছে ।
এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও মনোজের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকালে উৎপলের মৃতদেহ বাড়িতে ফেরার পর। তা আঁচ করে গ্রামে পুলিশও চলে যায় । তারই মধ্যে গ্রামের উত্তেজিত মানুষজন মনোজ ও তাঁর জ্যাঠা এবং কাকার বাড়িতে চড়াও হয়ে আগুন ধরিয়ে ।আগুনে পোড়ে মনোজ ও তাঁর জ্যাঠা ও কাকার বাড়িতে থাকা একাধীক গাড়ি ও খড়ের পালুই ।আগুন নেভানোর জন্য খবর দেওয়া হয় দমকলে ।দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌছে বেশকিছু সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে । যদিও খুনের ঘটনার বদলা নিতে বাগটুইয়ের কায়দায় খুনি ও তার পরিজনদের বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা পুলিশ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে না। তাই পুলিশ ওই দিন রাতভর অভিযান চালিয়ে গ্রামের ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের এই গ্রেপ্তারি নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলেছে নিহত উৎপল ঘোষের স্ত্রী সাধনাদেবী । তিনি
অভিযোগ করেছেন ,পুলিশ নিরপরাধ গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। অথচ অপরাধীরা এখনো দিব্যি গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।খুনি মনোজ ঘোষকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তার বাবা কার্তিক ঘোষ ও কাকা হারাধন ঘোষকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে।এখনও গ্রেপ্তারির ভয়ে গোটা গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য হয়ে রয়েছে । গ্রামে ব্রাহ্মণ নেই, নাপিত নেই । স্বামীর মৃত্যুর তিন দিন পর পরলৌকিক কাজ সম্পাদনে জন্য ক্ষৌরকর্ম করার রীতি থাকলেও তা করতে পারা গেল না ।
এই সবের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ সাধনাদেবী এদিন বলেন,’আমি চাই ’সিবিআই’ আমার স্বামীকে খুনের ঘটনার তদন্ত করুক ।’ নিহত উৎপল ঘোষের কাকা ভরত ঘোষও বলেন,’পুলিশ ঠিক মত কাজ করছে না।যার বাড়ি থেকে অস্ত্র গেল উৎপলকে খুন করার জন্য তাকে পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ।’ উৎপল বাবুও সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন ।
যদিও জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন বলেন, ‘পুলিশ কুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ।সব দিক বিবেচনা করেই পুলিশ তদন্ত করছে ।’।