এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০২ এপ্রিল : বেকারত্ব দূরীকরণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের শিক্ষিত বেকারদের “পকোড়া ভাজা”র পরামর্শ দিয়েছিলেন । পিছিয়ে ছিলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । তবে তিনি পকোড়ার পরিবর্তে “চপের দোকান” খোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন । কিন্তু সদিচ্ছা ও সুপরিকল্পনা থাকলে চপ বা পকোড়া না ভেজেও যে উপার্জনের নয়া দিশা দেখানো যায়,তার উৎকৃষ্ট প্রমান প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ । মাছের আঁষ,বাতিল সুতো,চুল প্রভৃতি ফেলে দেওয়া সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করে আজ কোটি কোটি ডলার উপার্জন করছে বাংলাদেশ । আর ওই সমস্ত কাজে লিপ্ত বহু মানুষ দেখছেন স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ । বাংলাদেশে রীতিমত শিল্পের আকারে এসব পণ্যের সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রপ্তানির ব্যবসা শুরু হয়েছে ।
মাছের আঁশ রপ্তানি : প্রায় দেড় দশক আগে জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৭ টি দেশে মাছের আঁশ সরবরাহ শুরু করে বাংলাদেশ । সেখানে মাছের আঁশ থেকে কোলাজেন ও জিলেটিন তৈরি করা হয়। ওষুধ, প্রসাধন সামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরি মাছের আঁশ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কোলাজেন ও জিলেটিন মাছের আঁশ দিয়ে তৈরি হয়, যা ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রী তৈরির কাজে লাগে । দেশগুলি মিলে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার টন আঁশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ । বাৎসরিক আয় ২০০ কোটি টাকার অধিক । বর্তমানে দেশ জুড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ।
বাতিল সুতোর ব্যবসা : পোশাক কারখানার বাতিল সুতো দিয়ে রীতিমতো কুটির শিল্প গড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ । নওগাঁ, বগুড়া ও জয়পুরহাটের তিনটা জেলায় বাতিল সুতার ওপর ভিত্তি করে বিশাল কুটির শিল্প তৈরি হয়েছে। বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার নসরতপুর ইউনিয়নের শাওল বাজারে শুধু এসব পরিত্যক্ত সুতার বিশাল একটি বাজার তৈরি হয়েছে । বাতিল সংগৃহীত কটন, নাইলন, পলিয়েস্টার, উল প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার সুতোকে আলাদা করে ডায়িং বা রঙ করার পর তাঁতিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় । এসব সুতা কেজি পিছু ১২০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয় ।
কারখানার ছাই রপ্তানি : ছাই বিক্রি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ । শুধুমাত্র ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ছাই রপ্তানি করেই বাংলাদেশের আয় হয়েছে তিন কোটি ২১ লাখ ৮৭ হাজার ডলার । বাংলাদেশের ইস্পাত কারখানাগুলিতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চুল্লির ধোঁয়া আটকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছাইয়ে রূপান্তর করা হয় । ওই ছাইকে বলা হয় স্টিল ডাস্ট । কালি ও প্রিন্টারের কার্টিজ তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় এই ছাই । চীন, ভারত, স্পেন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ইত্যাদি দেশে এই ছাই রপ্তানি করে বাংলাদেশ । এছাড়া পাটকাঠি বা ধানের তুষকে ৪৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় আট থেকে ১০ ঘণ্টা বিশেষ চুল্লির মাধ্যমে পুড়িয়ে এবং সেটাকে চূর্ণ করে চারকোল তৈরি করা হয় । আর এই চারকোল ব্যবহৃত হয় ফটোকপিয়ার ও প্রিন্টারের কালি, ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের সামগ্রী,জলের ফিল্টার তৈরি করতে । বহু মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ।
পাশাপাশি বাতিল চুলও আজ কর্মসংস্থানের দিশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশে । বিদেশে চুল রপ্তানি করে কোটি কোটি ডলার উপার্জন করছে সেখ হাসিনা সরকার । এই চুল থেকে মূলত পরচুলো তৈরি হয় । যদিও বাংলাদেশেই এখন উইগের কারখানা তৈরি হয়েছে ।।