প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ মার্চ : মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের অভিযানে দেদার উদ্ধার হচ্ছে বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র ।তা নিয়ে বিরোধীরা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করলেও অভিযানে বিরাম টানতে নারাজ পুলিশ । শনিবারের পর রবিবারও জেলায় অব্যাহত থাকলো বোমা উদ্ধারের ঘটনা । এমনকি বোমা ফেটে একজনের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য বোম ডিসপোজাল স্কোয়াডকে খবর দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ বোমা উদ্ধারের ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,তালিত রেল সংলগ্ন বর্ধমান বোলপুর জাতীয় সড়কের পাশের একটি মাঠের মধ্যে দুটি জারে বোমা রাখা ছিল । শনিবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে সেই খবর পেয়ে দেওয়ানদীঘি থানার পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় । দুটি জারে বোমা থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হবায় পরেই পুলিশ ওই জায়গাটি ঘিরে রাখে।রবিবার সকালে এলাকার মানুষ মাঠে দুই জার ভর্তি বোমা পড়ে থাকার কথা জানতে পারার পরেই আতঙ্কে পড়ে যান । রাতের অন্ধকারে লোকালয় সংলগ্ন মাঠে কারা জারে ভরে বোমা রেখে পালালো তার তদন্ত দেওয়ানদীঘি থানার পুলিশ শুরু করেছে।এলাকার বাসিন্দা শেখ আসরফ জানিয়েছেন, তালিতে বোমা উদ্ধারের ঘটনার ঠিক আগের দিন রাতে বর্ধমান থানার পুলিশ সরাইটিকর পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর পশ্চিমপাড়ার এক ব্যক্তির বাড়িতে আভিযান চালায় । ওই ব্যক্তির বাড়ির বাথরুমের ছাদে রাখা থাকা একটি ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় চারটি বোমা।বাড়িতে বোমা মজুতের অভিযোগে পুলিশ ওই বাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার করেছে।এইভাবে এত বোমা কারা কি কারণে এলাকায় মজুত করেছিল তা ভেবেই এখন দিশেহারা তালিত ও কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দারা ।
এদিকে তালিতে বোমা উদ্ধারের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে রবিবার সকালে শহর বর্ধমান বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ার বোমা ফেটে আহত হন এক ব্যক্তি ।আহত ব্যক্তির নাম অসীম বিশ্বাস।এলাকার বাসিন্দা ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন,এদিন সকালে
অসীম বিশ্বাস তাঁর বাড়ির বাইরে থাকা গোয়াল ঘরের আশপাশের ঝোপ জঙ্গল পরিস্কার করছিলেন । সেই সময় হঠাৎই সেখানে একটি বোমা ফাটে ।তাতেই আহত হন অসীম বাবু।চিকিৎসার জন্য তাঁকে উদ্ধার করে নিয়েযাওয়া হয় বর্ধমান হাসপাতালে। খবর পেয়ে বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায় ।ঘটনাস্থল ঘিরে রেখে পুলিশ আশপাশে আর কোথাও বোমা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে । বোম স্কোয়াড়কেও খবর দেওয়া হয়েছে ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন,যে জায়গায় বোমা ফেটেছে সেখানে ছোট ছেলেমেয়েরা বিকালে খেলা করতে যায়। ছোট ছেলেদের খেলার সময়ে বোমা ফাটলে তাদের প্রাণহানীর মত ঘটনাও ঘটতে পারতো । এদিনের ঘটনা এলাকাবাসীকে ১০০ মিটার দূরত্বে থাকা রসিকপুরে এক বছর আগে বোমা ফেটে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে ।
বোমা উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে তালিতে যখন হুলস্থূল চলছে সেই সময়ে ভাতার থানার পুলিশ পিস্তল ও ৪ রাউণ্ড কার্তুজ সহ এক দুস্কৃতিকে ধরে ফেলে।ধৃতের নাম উত্তম দাস। তাঁর বাড়ি ভাতার থানার কুবাজপুর গ্রামে । পুলিশের দাবী শনিবার গভীর রাতে ভাতারের মোহনপুর এলাকায় সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করছিল ওই দুষ্কৃতী। টহলদারি পুলিশ তার পথ আটকে তল্লাশী চালায় । তল্লাশিতে ওই দুস্কৃতির কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ৪ রাউণ্ড কার্তুজ উদ্ধার হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে ।সোমবার ধৃতকে পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় জানিয়েছেন,তালিতে দুটি জারে ২২ টি বোমা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।বোম ডিসতোজাল স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয়েছে ।বোমা উদ্ধারের ঘটনায় এখনও কেউ গ্রপ্তার হয় নি তবে বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ায় বোমা ফেটে এক ব্যক্তির আহত হওয়ার ঘটনা ও তালিতে বোমা উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
বর্ধমানের বিজেপি নেতা কল্লোল নন্দন এই প্রসঙ্গে বলেন,’মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর থেকে প্রতিদিন বোম, গুলি,বন্দুক উদ্ধার করছে পুলিশ। এর থেকে এটা প্রমাণ হয় যাচ্ছে এতদিন রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করে গিয়েছে । আর এখন পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাহবা পেতে পুলিশ ‘মালখানায়’ থাকা মালপত্র বের করে নতুন করে উদ্ধার দেখাচ্ছে ।’ যা হচ্ছে তার সবটাই সাজানো একটা নাটক ছাড়া আর কিছুই নয় বলে কল্লোল নন্দন মন্তব্য করেছেন ।।