প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ মার্চ : ওয়াকফ সম্পত্তিতে থাবা বসাতে চাওয়া প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হওয়া চাষির বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার হল বোমা । রহস্যজনক সেই বোমা উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেপ্তার করলো ওই বাড়ির মালিক তথা চাষি ফিরোজউদ্দিন মল্লিককে। বর্ধমান থানার কৃষ্ণপুর পশ্চিমপাড়ার এই ঘটনা এলাকাবাসী মহলে তুমুল চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে । বোম ডিসপোজাল স্কোয়াড উদ্ধার হওয়া বোমা গুলি এদিন বিকালে নিস্কৃয় করে।যদিও এলাকাবাসী ও ফিরোজউদ্দিনের পরিবার সদস্যরা দাবী করছেন,ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রী আটকানোর জন্যই প্রমোটার ও জমি দালালরা চক্রান্ত করেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন এলাকাবাসী ।
বর্ধমানের কেষ্টপুর গ্রামের এক প্রান্তে বাড়ি পেশায় চাষি ফিরোজউদ্দিন মল্লিকের। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে তিনি ওই বাড়িতেই থাকেন ।
ফিরোজউদ্দিনের ছেলে ইব্রাহিম মল্লিক এদিন বলেন, শুক্রবার অনেকটা রাতে তাঁদের বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশ তাঁদের ঘুম থেকে তোলে। ঈব্রাহিম জানায় কি কারণে গভীর রাতে পুলিশ তাঁদের বাড়িতে তা সে জানতে চায় । তখন পুলিশের একজন তাঁকে চড় মেরে বলে, ’তাঁদের বাড়িতে বোমা রাখা আছে’। ফিরোজউদ্দিনের স্ত্রী সাকিলা বানু অভিযোগে বলেন,’মধ্য রাতে তাঁদের বাড়িতে পুলিশ ঢুকে হুমকি দেয় । বাড়িতে থাকা অন্য মহিলাদেরও পুলিশ ধমকায় । সাকিলা বিবি দাবী করেন, তাঁদের পরিবার চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করে। পরিবারের কেউ রাজনীতিও করে না।চক্রান্ত করে কেউ ব্যাগে ৪টি বোমা ভরে নিয়ে এসে তাঁদের বাড়ির বাথরুমের ছাদে রেখে দিয়ে গিয়ে পুলিশকে ফোন করেছে ।তাঁরা নির্দোশ বলে জানান সাকিলা বিবি ।
পুলিশ যদিও ফিরোজউদ্দিণের পরিবার সদস্যদের এইসব বক্তব্যকে কোন গুরুত্ব দেয়নি । বর্ধমান থানার সাব-ইন্সপেক্টর সঞ্জয় মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে বাড়িতে বোমা মজুত রাখার অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে পুলিশ ফিরোজউদ্দিন মল্লিককে গ্রেপ্তার করে ।পুলিশ দাবি করেছে,ধৃত ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বোমার কারবারে সঙ্গে জড়িত । তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন এই কারবারে জড়িত রয়েছে । এদিনই ধৃত ফিরোজউদ্দিন কে পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে । আরও বোমা উদ্ধার ও ঘটনায় জড়িত বাকিদের হদিশ পেতে তদন্তকারী অফিসার এদিন ধৃতকে ৫ দিন পুলিশি হেপাজতে নেবার জন্য আদালতে আবেদন জানায় । ধৃতের আইনজীবী অবশ্য মিথ্য মামলায় ফাঁসানোর হয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশি হেপাজতের বিরোধীতা করেন । দুই পক্ষের সওয়াল শুনে সিজেএম ধৃতকে ৪ দিন পুলিশি হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ।
এই ঘটনা কার্যতই হতবাক করে দিয়েছে এলাকাবাসীকে। তাঁরা দাবী করেছেন, ফিরোজউদ্দিনের পরিবারটি সাতেপাঁচে থাকে না।প্রতিবেশী সোনেহারা বিবি ও সালমা বেগম বলেন, ‘এই ঘটনার নিয়ে আমরা শুধু আতঙ্কিতই নই, বিস্মিতও হয়েছি । কারণ, ফিরোজউদ্দিনের পরিবার চাষবাস নিয়েই থাকে। এরকম কিছুতে ওদের জড়িত থাকাটা কোন ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয় ।’ এলাকাসূত্রে এও জানা গিয়েছে ,একটি ওয়াকফ সম্পত্তি প্রমোটারদের বিক্রিতে বাঁধা দিয়েছিলেন ফিরোজউদ্দিন ও তাঁর পরিবার সদস্যরা। এলাকাবাসীর ধারণা,সেই কারণেই প্রোমোটার ও জমির দালালরা ফিরোজ উদ্দিনের পরিবারকে ফাঁসাতে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে । প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বার করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ।।