অভিষেক চৌধুরী,বর্ধমান, ২৪ ডিসেম্বর : গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর পরেই ‘ভাইপো’ হঠানোর ডাক দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । অন্যদিকে তৃণমূলে যোগদানের পরে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁর জমানত জব্দ করার পালটা চ্যালেঞ্জ জানালের সুজাতা খাঁ । বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর এক জনসভায় যোগ দিয়ে থশুভেন্দুকে আক্রমন করে সুজাতা বলেন ,‘২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী যে আসনে দাঁড়িয়ে ভোটে লড়বেন সেই আসনেই ভোটে লড়ে শুভেন্দুকে জামানত জব্দ করে দেবো ।’
এদিন ভিড়ে ঠাসা পূর্বস্থলীর বিশ্বরম্ভা মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুজাতা খাঁ মণ্ডল বলেন , ‘ছোট থেকে এটাই শুনে এসেছি সেই ১৬ বছর বয়স থেকে আজ ৬৬ বছর বয়স পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০ বছর কালিঘাটের একটা টালির চালার ঘরে থেকে আজ তিনি রাজ সিংহাসনে পৌঁছেচেন । একজন নারী হিসাবে এই বিষয়টি আমাকে সব সময়ে নাড়িয়ে যেত।হয়তো মাঝে কিছুদিন একটা দূরত্ব এসেছিল।সেটা মা মেয়ের সংসারে হয়েই থাকে।রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন মায়ের জায়গায় । মান- অভিমান আমি সন্তান হিসাবে মায়ের কাছে ফিরে গেলে মা বুকে জড়িয়ে নেবে।সেই আশা নিয়েই তৃণমূলে ফিরে এসেছি ।’
পাশাপাশি পুরনো দল বিজেপিকে নিশানা করে সুজাতা বলেন, ‘বিজেপিতে নারীদের কোন সন্মান নেই । তপশিলি পরিবারের মেয়ে হওয়ায় আমি বিজেপিতে কোন সন্মান পাইনি ৷ কোন পদের লালসায় আমি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসিনি । বিজেপিতে মতাদর্শের অভাব হচ্ছিল ।’ তাঁর কথায়, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে যে সমস্ত দুর্ণীতিগ্রস্ত মানুষগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম।সেই সব সারদা,নারদা ও রোজভ্যালি দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত সেই সব ধান্দাবাজ, চোর , দুর্নীতিগ্রস্ত পাল্টিবাজরা ১০ বছর ধরে তৃণমূলকে ভোগ করে বিজেপিতে গিয়েছে।সেই কারণে তাঁদের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ে নেমেছি ।’
এরপর সুজাতা বলেন, ‘আমি জানি আমার লড়াইটা অনেক কঠিন।কারণ আজও এই সমাজের মেয়েদের সিঁদুরের পরীক্ষা দিতে হয়।এই সমাজে আজও সীতারা কাঁদে।আজ এই কলি যুগে সীতা হয়ে সুজাতাকেও কাঁদতে হচ্ছে। আমাকে কাঁদতে হচ্ছে শুধু দলত্যাগ করার অপরাধে।অথচ যেদিন আমার স্বামী দলত্যাগ করেছিল সেইদিন তো আমার মনে হয়নি স্ত্রী হিসাবে তাকে ডিভোর্স দেওয়া দরকার।আমি সেইদিন আমার স্বামীর জন্য জঙ্গলমহলের মত সন্ত্রাসপ্রবন এলাকায় গিয়ে একা লড়েছিলাম । আর আজ যখন আমার মনে হল আমার একটু নিঃশ্বাস নেওয়া দরকার,একটা নারীর পাশে নারীর লড়াইয়ে থাকা দরকার সেই সময়ে দলত্যাগ করার জন্য আমাকে ডিভোর্সের সন্মুখীন হতে হল । রামচন্দ্রের জন্য যে সীতামাকে ১৪ বছর বনবাসে যেতে হয়েছিল।আর আজকে শুধু দলত্যাগের জন্য সুজাতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে।অথচ আমার প্রাক্তন দলের নেতাদের মনে হল না এই মেয়েটার পাশে দাঁড়ানো দরকার ।’
এরপর জনসভায় উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন , ‘কথা দিয়ে যাচ্ছি তৃতীয়বারের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসাবো। এবার আমার প্রিয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য এই সুজাতা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত প্রস্তুত থাকবে ।’ বিজেপিকে তৃণমূলের বি টিম বলে কটাক্ষ করে সুজাতা বলেন,বি টিম কেন করবো ? তৃণমূলের এ টিম অর্থাৎ আসল দলটাই করবো । যে দলটার সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।চোর নেতাদের দল করবো না ।’
এদিন বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সুজাতা বলেন, “গত লোকসভা ভোটের সময়ে বিজেপি নেতারা বলেছিলেন মোদিজী ভারসেস হু ? সুজাতা এদিন বলেন আজ আমি জানতে চাই এবাবের বিধানসভা ভোটে মমতা ভারসেস হু ?’ পাশাপাশি বিজেপিকে বিদ্রুপের ভঙ্গীতে সুজাতা বলেন ,’ এতবড় একটা সর্বভারতীয় দল এখনও পর্যন্ত মমতার বিপক্ষে মুখ খুঁজে পাচ্ছে না । বিজেপিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে এখন ছয়জন দাবিদার ।আর উপমুখ্যমন্ত্রী পদে দাবিদার ১৩ জন।এখন দেখার এদের মারপিটে শেষ পর্যন্ত কে জেতে?আমরা মুখ্যমন্ত্রী পদে বিজেপির মুখ’কে দেখতে চাই । নয়তো বুঝবো বিজেপি ‘ফেস অফ’।’ পরিব
সুজাতার কথায়, ‘বিজেপি বলে, চা ওয়ালা তাদের প্রধানমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও এক সময়ে দুধ বিক্রী করতেন । তাহলে তো আমরাও বলতে পারি একজন দুধ ওয়ালা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। সেটাও আমাদের কাছে সন্মানের।কারণ আমরা ক্রোড়পতি ঘর থেকে মুখ্যমন্ত্রী পাইনি । হতদরিদ্র পরিবার থেকে মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছি ।’