এইদিন ওয়েবডেস্ক,রামপুরহাট(বীরভূম),২২ মার্চ : বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের বাসিন্দা বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখের বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যুর পর কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা । সোমবার ওই ঘটনার পর রাতের দিকে প্রায় ১০ টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । মোট ১০ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন । সোমবার ৩ টি ঝলসানো মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল দমকলকর্মীরা । এরপর মঙ্গলবার সকালে আরও ৭টি ঝলসানো মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে । তৃণমূল কংগ্রেস উপপ্রধানের খুনের প্রতিশোধ নিতেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠছে । যদিও বীরভূম জেলার তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি,শর্ট সার্কিট থেকে টিভি বিস্ফোরণের ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে । তিনি বলেন, ‘আমি সকালে খবর পেয়েছি,একটি বাড়িতেই সাত জনের মৃত্যু হয়েছে ।’
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী বলেন, ‘সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নাকি শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে তা তদন্ত হলেই বোঝা যাবে ।’ এই ঘটনায় এযাবৎ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার । এদিকে ঘটনার পর ক্লোজ করা হয়েছে স্থানীয় থানার ওসি,মহকুমা শাসককে(এসডিপিও) । ঘটনার তদন্তের জন্য জ্ঞানবন্ত সিং ও মিরাজ খালিদের নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়েছে । পাশাপাশি কলকাতা থেকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে সিআইডি ও ফরেন্সিকদল । এলাকায় উত্তেজনা থাকায় বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট ।
জানা গেছে,সোমবার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে জাতীয় সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন ভাদু শেখ । সেই সময় বাইক আরোহী দুষ্কৃতীরা এসে তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে ।গুরুতর জখম হন ভাদু । তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন । আর তাঁর মৃত্যুর পরে ওই দিন রাতেই গ্রামের একের পর এক বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যায় ।
ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । তিনি বলেন, রাজ্যে হিংসার সংস্কৃতি চলছে। মুখ্যসচিবের কাছে তথ্য তলব করেছেন তিনি । তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল । ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । তিনি বলেন, ‘মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ১০ জন রাজ্যবাসীর বেঘোরে প্রাণ চলে গেল অথচ পুলিসের কাছে কোনও ইনপুট নেই ! পুলিস কি করছে ? এটা সরকার চলছে না সার্কাস চলছে ? আমরা মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিসমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি ।’
জানা গেছে, এদিকে এই ঘটনার পর নবান্নে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে নিয়ে জরুরী বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও । মঙ্গলবার ফিরহাদ হাকিম ও আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় চপারে করে রামপুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে । তবে রামপুরহাট যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘ঠিক কি ঘটেছিল তা কলকাতায় বসে অনুমান করা সম্ভব নয় । তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের কারন সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয় ।’।