জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১৬ মার্চ : যেভাবে চেয়ারম্যান পদের জন্য বেশ কয়েকটি নাম বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে বিচার করলে তিনি ফার্স্ট বা অটো চয়েস হওয়া সত্ত্বেও শহরবাসীর মনে ছিল একরাশ আশঙ্কা ও উদ্বেগ। অবশেষে সমস্ত সংশয় দূর করে দিয়ে ১৬ ই মার্চ গুসকরা বিদ্যাসাগর হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা পুরসভার ষষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসাবে শপথ নিলেন কুশল মুখার্জ্জী। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস ( বর্ধমান উত্তর )। ঘোষক কুশল বাবুর নাম ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যাসাগর হলের ভিতরে ও বাইরে উপস্থিত তৃণমূল কর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং প্রবল করতালির মধ্যে দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। ভাইস-চেয়ারম্যান হিসাবে শপথ নিলেন বেলি বেগম। একইসঙ্গে বাকি চোদ্দ জন কাউন্সিলারও শপথ নেন। প্রসঙ্গত ষোলোটি ওয়ার্ড বিশিষ্ট গুসকরা পুরসভায় ষোলো জন কাউন্সিলার তৃণমূলের, বিরোধী দলের কোনো প্রতিনিধি নাই ।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা শুভ সূচনা করেন আউসগ্রাম ১ নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অরিন্দম মুখার্জ্জী। উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারপার্সন গীতারাণী ঘোষ, নরেশ্চন্দ্র বাউরি, অরিন্দম মুখোপাধ্যায়, অশোক কাঁড়ার, সৌরভ চোধুরী, উত্তম মণ্ডল, অরুণ সোম প্রমুখ। নতুন চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন পুরসভার বড়বাবু মধুসূদন পাল, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর দেবাশীষ গোস্বামী সহ অন্যান্য কর্মীরা। আর ছিল বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আগত অসংখ্য তৃণমূল কর্মী ও শহরের বেশ কিছু গণমান্য ব্যক্তি। অসুস্থতার জন্য স্হানীয় বিধায়কের অনুপস্থিতি অনুষ্ঠানকে কিছুটা ম্লান করে তোলে। যদিও সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে বাম আমলের মত সমাজসেবীর মোড়কে পরিচিত দলীয় নেতাদের উপস্থিতি কিছুটা হলেও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
গুসকরা লায়ন্স ক্লাব, ছন্নছাড়া ক্লাব, প্রতিটি ওয়ার্ড, শহরের কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি পুষ্প স্তবক দিয়ে নব নির্বাচিত পৌর প্রধান সহ অন্যান্য কাউন্সিলারদের শুভেচ্ছা জানান।
কুশল বাবুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ছাত্র পরিষদের সদস্য হিসাবে। তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অনেকের মত তিনিও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০১৭ সালের শেষের দিকে শহরের এক ডামাডোল পরিস্থিতিতে তিনি শহর সভাপতির দায়িত্ব পান। ততদিনে তৃণমূলের প্রথম চেয়ারম্যান দল থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে গুসকরাতেও এক শ্রেণির তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কাটমানির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সমস্ত বিতর্ক দূরে সরিয়ে রেখে তিনি ধীরে ধীরে তৃণমূলের সংগঠনকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য প্রচন্ড পরিশ্রম করতে শুরু করেন। পাশে পান তৃণমূল অন্ত প্রাণ একগুচ্ছ কর্মীকে। কিন্তু লোকসভা ভোটে গুসকরায় দল কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। পরপর দু’বার পুরবোর্ডে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলেও বিজেপির থেকে বিপুল ভোটে দল পেছিয়ে যায়। শহর জুড়ে বিজেপির কর্মীদের দাপটে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী দিশেহারা হয়ে পড়লেও তিনি হতাশ হননি। আগের মতই পরিশ্রম করতে শুরু করেন। পাশে পান পুরনো কর্মীদের ।
বিদায়ী বোর্ডের কাউন্সিলার না হওয়া সত্ত্বেও তার পরিশ্রমকে মর্যাদা দিয়ে দল তাকে পুর প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য হিসাবে মনোনীত করে। করোনার সময় শহর সভাপতি ও প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য হিসাবে তার ভূমিকা ছিল অসাধারণ। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন শহরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেছেন শহরের মানুষের ‘নয়নমণি’, আপদে-বিপদের সাথী। লো-প্রোফাইলের নেতা হয়েও যে শহরের প্রথম নাগরিক হওয়া যায় আগামী প্রজন্মের কাছে সেই দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তিনি। ভদ্র আচরণ ও মিষ্ট ব্যবহারের জন্য অধিকাংশ গুসকরাবাসীর সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের কাছেও তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
কুশল বাবু বলেন,’এটা একটা বিরাট দায়িত্ব এবং এই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ভূমিপুত্র, শহর সভাপতি ও প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য হিসাবে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি সেটাই এক্ষেত্রে কাজে লাগাব এবং দলনেত্রীর উন্নয়নের সুফল প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। শহরের প্রবীণ নাগরিকদের পরামর্শ নিয়ে চলার চেষ্টা করব। সমস্যা হলে মাথার উপর স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার ও ‘দাদা’ অনুব্রত মণ্ডল তো আছেনই ।’।