দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৫ মার্চ : সমাজের সহায় সম্বলহীন মহিলা ও শিশুদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই সব থেকে কঠিন । ঠিকমত দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের জোগাড় হয় না । অর্ধাহার অনাহারে দিন কাটে রেলস্টেশন,বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী প্রতিক্ষালয় অথবা ফুটপাতে । ওই সমস্ত অসহায় মানুষদের কথা ভেবে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার সগরা গ্রামে একটি অনাথ আশ্রম নির্মান করছেন অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক উৎপল রায়(৭১) । বাবা অসিত রায় এবং মা কমলাদেবীর নামেই প্রস্তাবিত অনাথ আশ্রমের নামকরণ করেছেন ‘অসিত কমলা ট্রাষ্ট’ । অবসরের পর যেটুকু অর্থ তিনি পেয়েছিলেন সব ব্যয় করছেন ওই অনাথ আশ্রম নির্মাণের কাজে । এক বছরের মধ্যেই অনাথ আশ্রম চালু করার লক্ষ্য নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উৎপলবাবু ।
বর্ধমানেই বাড়ি উৎপল রায়ের । কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরশিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি । তাই কর্মসুত্রে অধিকাংশ সময় কেটেছে কল্যানীতে । উৎপলবাবু বলেন, ‘নিরাশ্রয় মহিলা ও শিশুদের কি কঠিন জীবন সংগ্রাম করতে হয়,ভেবে কষ্ট হয় । একটা বয়স পর্যন্ত মহিলারা কাজকর্ম করে নিজের অন্তত অন্ন সংস্থানের ব্যাবস্থাটুকু করতে পারেন । কিন্তু ৫০ বছরের উর্দ্ধে বয়স হলে অস্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য রোগব্যাধি ঘিরে ধরে তাঁদের । তখন কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন । আর শিশুরা তো সম্পূর্ণভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল । পড়াশোনা তো দূর,জোটে না ঠিকমত পুষ্টিকর খাবার । তাই মনে মনে ঠিক করেছিলাম ওদের জন্য কিছু করবো । আর চাকরি থেকে অবসরের পরে সেই লক্ষ্যেই অনাথ আশ্রম নির্মানের কাজে নেমেছি ।’ তিনি জানান,অনাথ শিশু ও ৫০ এর উর্ধে মহিলাদেরই অনাথ আশ্রমে রাখা হবে ।
জানা গেছে,সগরা গ্রামে হাটপুকুর ও তার পাড়ের অংশ মিলে প্রায় ১৮ বিঘা জায়গা কিনেছেন উৎপলবাবু । বর্তমানে প্রশাসনিক কাজকর্ম ও অতিথিনিবাসের জন্য একটি দ্বিতল ভবন নির্মানের কাজ চলছে । অনাথ শিশুদের সুশিক্ষিত করতে পরবর্তী কালে একটি স্কুল নির্মান করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন । উৎপলবাবু বলেন, ‘পুকুরে মাছ চাষ, পুকুর পাড় ও জমিতে শব্জি চাষ করা হবে । আশ্রমের প্রয়োজন মিটিয়ে যেটুকু উদ্বৃত্ত হবে তা বিক্রি করা হবে । আর সেই টাকা অনাথ আশ্রমের খরচখরচায় কাজে লাগানো হবে ।’ আশ্রম পরিচালনার জন্য একটি ট্রাষ্ট গঠন করাও হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন । আশ্রম নির্মানের কাজের তদারকি করতে অধিকাংশ সময়েই সগরা গ্রামেই কাটাচ্ছেন উৎপলবাবু । তবে তদারকির কাজে তিনি তাঁর ছোট ভাই নিলোৎপলবাবুও সহযোগিতা পাচ্ছেন ।।