দিব্যেন্দু রায়,পূর্ব বর্ধমান,১৪ মার্চ : অতি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার নারকেল গাছ । হঠাৎ করে সাদা হয়ে যাচ্ছে গাছের পাতা । একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে গাছের পাতার তলার জমেছে সাদা মোমের মতো পুরু আস্তরণ । ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জেলা জুড়ে । কৃষিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিশেষ এক কীটের আক্রমণেই ঘটছে এই ঘটনা । দ্রুত বংশ বিস্তারের কারনে ওই কীটের হামলা থেকে গাছকে রক্ষা করা খুবই মুশকিল । তবে গনহারে কীটনাশক ছড়ালে একমাত্র তখনি এই কীটকে দমন করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,বিগত বেশ কিছুদিন ধরে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার, মঙ্গলকোট, কাটোয়া, কেতুগ্রাম,আউশগ্রাম,মন্তেশ্বর, গলসি প্রভৃতি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নারকেল গাছের পাতা হঠাৎ করে সাদা হতে শুরু করেছে । দেখা যাচ্ছে নাড়কেল গাছের পাতার তলার দিকে সাদা মোমের মতো পুরু আস্তরণ জমেছে । অনেকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে এই ঘটনা ঘটছে বলে গুজব ছড়াচ্ছেন ।
তবে কৃষিবিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যুদ্ধের কারনে নয়,আদপে এক বিশেষ কীটের আক্রমণেই ঘটছে এই ঘটনা । কীটটির নাম রুগোজ স্পাইরালিং হোয়াইট ফ্লাই ৷ বিজ্ঞানসম্মত নাম অলিওরোডিকাস রুগিওপারকুলেটাস ।
কাটোয়া ১ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা আজমীর মণ্ডল বলেন,’কীটগুলি মাছির মতো দেখতে সাদা রঙের হয় । পূর্ণাঙ্গ মাছির ডানায় এক জোড়া হালকা বাদামি বিন্দু থাকে । স্ত্রী মাছিগুলি গাছের পাতার নীচের দিকে চক্রাকারে প্রায় ২০০টি ডিম পাড়ে। তুলোর মতো আঁঠাল আস্তরণ দিয়ে ডিমগুলিকে ঢেকে দেয় । তার ফলে পাতা সাদা হয়ে যায় ।’ তিনি জানান,ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মাছিতে পরিণত হতে প্রায় ১ মাস সময় লাগে । নারকেল ছাড়াও আম, জামরুল, কাঁঠাল-সহ বিভিন্ন গাছেও এই কীট বাঁসা বাধে বলে তিনি জানিয়েছেন ।
তিনি বলেন, ‘এই কীট গাছের রস চুষে খায় । ফলে পাতা শুকিয়ে যায় । এর ওপর ছত্রাকের আক্রমণও ঘটে ।’ কিন্তু প্রতিকার কি ? কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন,রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করলে এই পোকা আরও ব্যাপক শক্তি নিয়ে ফিরে আসতে পারে । তাই তাঁরা আক্রান্ত গাছে জৈব কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন । ভাতার ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা বরুণ হালদার বলেন,’গ্রামবাংলার অধিকাংশ পরিবার ফলগাছের তেমন যত্ন নেন না । বছরে দুবার করে নিয়মিত গাছের গোঁড়ায় পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া উচিত । তবে এখন প্রথম করনীয় রোগ পোঁকার দমন ।’।