🌺 সারদা তখন পাঁচ বছর অতিক্রম করে ছ-বছরে পড়েছেন। আর ওদিকে দক্ষিণেশ্বরে কামারপুকুরের গদাধর চট্টোপাধ্যায়-ভবিষ্যতের শ্রীরামকৃষ্ণ—সাধনার তােড়ে ভেসে চলেছেন। জগজ্জননীর দর্শন না পেয়ে তিনি থামবেন না। অবশেষে একদিন ব্যাকুলতার বেদনায় মায়ের হাতের খঙ্গ তুলে নিয়ে মায়ের চরণেই যখন আত্মাহুতি দিতে উদ্যত হলেন , মা দেখা দিলেন তখন। এরপর থেকে জগজ্জননী তার কাছে জীবন্ত হয়ে উঠলেন—আর তিনি মন্দিরের পাষাণ প্রতিমা নন। মায়েছেলের এক অপূর্ব দিব্যলীলা অভিনীত হয়ে চলল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে যে খেলা জগৎ আর কখনও দেখেনি। কিন্তু সাধারণ লােকের পক্ষে সেই দিব্যলীলা বােঝা সম্ভব নয়। তাদের চোখে গদাধর পাগল বলে প্রতিপন্ন হলেন। গদাধরের ‘মস্তিষ্কবিকৃতি’র খবর কামারপুকুরেও এসে পৌছল। মা চন্দ্রমণি দেবী তাঁকে দক্ষিণেশ্বর থেকে গ্রামে নিয়ে এলেন এবং তার ঈশ্বর-পাগল মনকে সংসারমুখী করার জন্য তার বিবাহের চেষ্টা করতে লাগলেন। পাত্রীর সন্ধান খুব গােপনে চলতে লাগল— পাছে গদাধর জানতে পেরে বেঁকে বসেন। কিন্তু যখন তিনি জানতে পারলেন, তখন তিনি বিরক্ত তাে হলেনই না, উপরন্তু বাড়িতে এই ধরনের বিবাহ-অনুষ্ঠান হলে বাড়ির শিশুরা যেমন আনন্দ করে, সেরকম আনন্দ করতে লাগলেন। কিন্তু খোঁজ-খবর করেও মনােমতাে পাত্রী কিছুতেই পাওয়া গেল না। সবাইকে অবাক করে দিয়ে গদাধর তখন বলে বসলেন,‘এদিক ওদিক খুঁজে কি হবে ? জয়রামবাটীর রামচন্দ্র মুখুজ্যের বাড়িতে দেখগে, বিয়ের কনে সেখানে “কুটোবাঁধা” আছে। অর্থাৎ সারদাদেবী তার জন্যই নির্দিষ্ট হয়ে আছেন, ঠিক যেভাবে গাছের কোন ফলকে কুটো বেঁধে অন্য ফলের থেকে আলাদা করে রাখা হয় দেবতাকে নিবেদন করার জন্য ।।
সংগৃহীত : ‘শ্রীমা সারদাদেবীর জীবনের কয়েকটি ঘটনার সংকলন’- রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার