দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৭ মার্চ : আত্মীয় এক যুবকের বিয়ে ছিল রবিবার রাতে ৷ কিন্তু চুড়ান্ত মুহুর্তে রীতিমত ফিল্মি কায়দায় প্রেমিকের সঙ্গে চম্পট দেয় কনে । তাই পাত্রকে ‘লগ্নভ্রষ্ট’ হওয়া থেকে বাঁচাতে বিনাপণে বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিল পাত্রের পরিবার । একদিকে ভালো ছেলে,তার উপর বিনাপণে বিয়ে,এই ‘সুবর্ণ সুযোগ’ ছাড়তে পারেননি জনৈক এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীর বাবা-মা । ছাত্রীকে ঘুম থেকে তুলে কনের বেশে সাজিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয় ছাদনাতলায় । কিন্তু বিধি বাম । কোনওভাবে পুলিশের কাছে খবর চলে যাওয়ায় দ্বিতীয় বারেও বিয়ের পিঁড়িতে বসা হল ওই যুবকের । রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বেরোয়া গ্রামে । ছাত্রী জানিয়েছে,সে সোমবারের পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল । এই অবস্থায় বিয়ে করার চিন্তা তাঁর মাথাতেই ছিল না । এক প্রকার জোর করেই বিয়েতে বাধ্য করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ তার । অবশ্য এই কারনে তার সোমবার মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষা আটকে যায়নি ৷ ভাতার থানার ওসি সৈকত মণ্ডলের তৎপরতায় এদিন বাংলা পরীক্ষা ভালোভাবেই দিতে সক্ষম হয় ওই মেয়েটি । মেয়েটি জানিয়েছে,সে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় ।
জানা গেছে,ভাতারের বেরোয়া গ্রামের বাসিন্দা ওই ছাত্রীরা দুই বোন। সে ছোট । দিদির বিয়ে হয়ে গেছে । তাদের বাবা জনমজুরির কাজ করেন ৷ মা গৃহবধু । মাহাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে মেয়েটি । সিট পড়েছে এরুয়ার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে । অন্যদিকে ছাত্রীদের ওই আত্মীয় যুবকের বাড়ি দেওয়ানদিঘি থানার তালিত গ্রামে ।
মেয়েটির মা বলেন,’আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় । বড় মেয়ের বিয়েতে অনেক ধারদেনা হয়ে গেছে । ছোট মেয়ের বিয়ে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম । এদিকে তালিতের ওই ছেলেটিও বেশ ভালো । তাই তার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর যখন আমাদের ছোট মেয়ের সঙ্গে বিনাপণে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা রাজি হয়ে যাই । তবে আমরা অনুরোধ করেছিলাম যাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিয়েটা হয় । কিন্তু পাত্রপক্ষ শর্ত রেখেছিল রবিবার রাতেই বিয়ে দিতে হবে । তাই বাধ্য হয়ে আমরা বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম ।’
জানা গেছে,রবিবার রাতে বেরোয়া গ্রামে ওই ছাত্রীর বাড়িতে তখন সাজোসাজো রব । পরের দিন পরীক্ষার কারনে মেয়েটি একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিল । তাকে ঘুম থেকে তোলা হয় । এদিকে ততক্ষণে বরসহ বরপক্ষের লোকজনও চলে এসেছে । এই পরিস্থিতির মাঝে রাত্রি ঠিক এগারোটা সাড়ে এগারোটা নাগাদ হানা দেয় ভাতার থানার পুলিশের একটি দল । আটকে দেওয়া হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রীর বিয়ে । অবিভাবকের কাছ থেকে ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর করে নেওয়া হয় । শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয় বর ও বরপক্ষের লোকজন ।।