প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ ফেব্রুয়ারি : অন্ধকার নামলেই শুরু হয়ে যায় দামোদরের পাড় লাগোয়া চর থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে পাচার।তার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার শম্ভুপুর এলাকার দামোদরের পাড়ের বোল্ডার পিচিং।এই ঘটনা দেখে গ্রাম বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন শম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দারা।তাঁরা ঘটনা বিষয়ের গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্র ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পঠিয়েছেন। পাশাপাশি জেলা শাসকের দফতরেও জমা দিয়েছেন অভিযোগ পত্র।মুখ্যমন্ত্রী কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই আপাতত তাকিয়ে শম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দারা।পাশাপাশি তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন,এত কিছুর পরেও যদি নদি পাড়ের বোল্ডার পিচিংয়ের ক্ষতি করে বালি তোলা বন্ধ না হয় তবে তা রুখতেই নিজেরাই আশরে নামবেন ।
জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম শম্ভুপুর । এই গ্রামেের এক পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর নদ।পূর্বে নদি পাড়ের ভাঙনে এলাকার অনেক চাষির জমি নদি গর্ভে চলে যায়। বিপন্ন হতে বসে শম্ভুপুর গ্রামের একটা বড় অংশ।বিপর্যয়ের হাত থেকে শম্ভুপুর গ্রামকে বাঁচাতে দামোদর পাড়ের বিস্তির্ণ এলাকা বোল্ডার দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়।তার পরথেকে শম্ভুপুর গ্রামের মানুষজন স্বস্তিতেই ছিলেন।কিন্তু সম্প্রতি গ্রামবাসীদের রাতের ঘুম ফের কেড়ে নিয়েছে অসাধু বালি কারবারী।গ্রামবাসীরা ওই বালকারবারীদের বিরুদ্ধেই এখন রুখে দাঁড়িয়েছেন ।
গ্রামবাসীরা লিখিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এক বালি কারবারী বর্ধমান সদর ২ ব্লকের বড়শুলের গোপালপুর মৌজায় বালি খাদানের লিজ পেয়েছেন। সেই খাদান থেকে বালি লোড হওয়া ট্রাক ও ডাম্পার গুলির গোপালপুর মৌজার ঘাট দিয়েই যাবার কথা।কিন্তু তা না করে ওই বালি কারবারী জামালপুর ব্লকের শম্ভুপুরে অবৈধ ভাবে নদির বাঁধ কেটে বালির গাড়ি যাতায়াতের ঘাট চালু করেছে।এমনকি সন্ধ্যা নামলেই ওই বালি কারবারীর লোকজনকে জেসিবি মেশিন নিয়ে গোপালপুর থেকে শম্ভুপুর মৌজা এলাকায় চলে আসছে।এরপর তারাই শম্ভুপুর এলাকার দামোদর পাড়ের বোল্ডার পিচিং লাগোয়া চর থেকে দেদার বালি তুলে নিয়ে ট্রাকে ও ডাম্পারে লোড করে পাচার করাচ্ছে। গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ গ্রীন ট্রাইব্যুনালের রায়কে সম্পূর্ণ ভাবে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই শম্ভুপুর এলাকায় অবৈধ ভাবে বালি তুলে পাচার করা হচ্ছে ।এরকারণে শম্ভুপুর গ্রামে দামোদর পাড়ের বোল্ডার পিচিং মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।বোল্ডার পিচিং ধসে পড়লে শম্ভুপুর গ্রাম ফের দামোদরের গ্রামের মুখে পড়ে বিপন্ন হবে বলে গ্রামবাসীরা আশংকা প্রকাশ করেছেন’। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক অভিযোগ করেছেন,’প্রতিদিন অতিমাত্রায় ওভারলোড বালির লরি ও ডাম্বার এই এলাকা দিয়ে গিয়ে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে কালাড়াঘাট থেকে পলেমপুর যাবার নবনির্মিত পিচ রাস্তা। এই বিষয়েটি নিয়ে খুব শীঘ্রই তাঁরা রাজ্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন ।
গ্রামবাসীদের তোলা অভিযোগ যে অমূলক নয় তা ব্লক ভূমি দফতরের আধিকারিকদের কথাতেই এদিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।ভূমি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ,শম্ভুপুর এলাকা দিয়ে বালির গাড়ি নিয়ে যাবার জন্য যে ঘাট করা হয়েছে সেটি অবৈধ ভাবেই করা হয়েছে। তার কারণে ভূমি দফতর জামালপুর থানায় এফআইআর করেছে।এছাড়াও জামালপুরের জোড়বাঁধ ও সেলিমাবাদ মৌজা এলাকায় অবৈধ খাদান খোলার অভিযোগ পেয়ে ভূমি দফতর তা নিয়েও এফআইআর করেছে।যদিও এই দুই এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এফআইআর যাই হোক না কোন, সন্ধ্যায় পর থেকে ভোর পর্যন্ত এই দুই এলাকার অবৈধ খাদান থেকে নিত্যদিন বালি লুঠ চলেই যাচ্ছে । বালি লুঠ বন্ধের কোন ব্যবস্থাও হয়নি ।
জানা গিয়েছে ,শম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দাদের
আনা অভিযোগের বিষয়টি জানার পরেই পুলিশ বুধবার রাতে ওই অবৈধ ঘাট এলাকায় অভিযান চালায় । চারটি বালির লরি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি পুলিশ ওই লরিগুলির চালককে গ্রেফতার করেছে । সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে বৃহস্পতিবার পুলিশ চার ধৃতকেই পেশ করে বর্ধমান আদালতে। যদিও আদালতের নির্দেশে ধৃত চার লরি টালকই এদিন জামিনে ছাড়া পেয়ে যান ।।