জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),০৩ মার্চ : দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল তেরোটা বছর। একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে সেই দিনের সেই ছোট্ট চারগাছ ‘কুমুদ সাহিত্য মেলা’ আজ ডালপালা মেলে দিয়ে চোদ্দ বছরে পদার্পণ করল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল তার প্রচার ও প্রসার। তারই সূত্রে বিগত বছরের মত এবছরও কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির উদ্যোগে পল্লীকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের ১৪০ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ৩ রা মার্চ কবির জন্মভিটে মঙ্গলকোটের কোগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় ‘কুমুদ সাহিত্যমেলা’। প্রায় সারাদিন ধরে উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম – রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সমাজের বিভিন্ন স্তরের অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গমগম করে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। কবির স্মৃতিচারণার সঙ্গে সঙ্গে চলে স্বরচিত কবিতা পাঠ ও সাহিত্যচর্চা। মেলা কমিটির পক্ষ থেকে বিগত বছরের মত এবছরও সমাজজীবনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরের বহু বিশিষ্ট মানুষের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের হাতেও তুলে দেওয়া হয় মানপত্র ও স্মারক সম্মান। ডাক্তার, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, সাহিত্যিক, উকিল, গবেষক, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও মেলাস্হলে উপস্থিত ছিলেন। বিগত বছরের মত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবছরও অনেক সাংবাদিকও হাজির ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত ‘এক টাকার’ ডাক্তার সুশোভন ব্যানার্জ্জী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ব্যস্ত মানুষটির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এবং স্বরচিত কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানটিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। বয়স অল্প হলে তিনি এখানে বাড়ি তৈরি করে মাঝে মাঝে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। মেলা কমিটির পক্ষ থেকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘কুমুদ সাহিত্য রত্ন’। ছিলেন ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ সেবার জগতের ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল’ তৃপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আবেগ ঘন বক্তব্য শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘বীরভূম রত্ন’। এছাড়া ‘সমীর রায় রত্ন’ পান আইনজীবী সঞ্জয় ঘোষ, ‘লোচনদাস রত্ন’ পান লোকসংস্কৃতি গবেষক তথা ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুখেন্দু হীরা। প্রসঙ্গত দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তার গবেষণাধর্মী লেখা ইতিমধ্যেই সাহিত্যপ্রিয় পাঠক সমাজের কাছে সমাদর লাভ করেছে। ‘বিধান রায় রত্ন’ তুলে দেওয়া ওয়েস্টবেঙ্গল বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আইনজীবী শ্যামল ঘটকের হাতে, বিশেষ সম্মান দেওয়া হয় বিশিষ্ট সাংবাদিক ধীমান রায়কে। এছাড়া ‘রেজাউল করিম রত্ন’, ‘নজরুল ইসলাম রত্ন’ সহ আরও অসংখ্য সম্মানে উপস্থিত বিশিষ্টদের ভূষিত করা হয়।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিখ্যাত আইনজীবী তথা সাহিত্যিক জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু সিংহরায়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সুখেন্দু হীরা, পিণ্টু মুখার্জ্জী, সাধন মণ্ডল প্রমুখ।
আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পল্লী কবির নাতনি মহাশ্বেতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্রোহী কবির নাতনি সোনালী কাজী, বাচিক শিল্পী নীপা চক্রবর্তী, শিশু সাহিত্যিক পার্থ মুখোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহম্মদ ইব্রাহিম, কলকাতা হাইকোর্টের এ.জি.পি আনসার মণ্ডল, বিধান শিশু উদ্যানের সম্পাদক গৌতম তালুকদার, পুলিশ সমাজের গর্ব মঙ্গলকোট থানার আই.সি তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী পিণ্টু মুখার্জ্জী যার হাত ধরে অসংখ্য ক্রিমিন্যাল সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। এছাড়াও ছিলেন অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। ছিলেন যার হাত ধরে এই সাহিত্য মেলার শুভ সূচনা হয় সেই শ্যামলাল মকদমপুরী। সুদূর মুর্শিদাবাদ থেকে তার পক্ষে মেলা পরিচালনা করা সমস্যা হচ্ছিল বলে সেই দায়িত্ব অর্পণ করেন অনুজ মোল্লা জসীমউদ্দীনের হাতে। তারপর থেকে জসীমের উদ্যোগে আয়োজিত হয়ে চলেছে এই সাহিত্যমেলা।
উপস্থিত প্রতিটি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেলা কমিটির সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন বললেন,’সবার সহযোগিতায় এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ধীরে ধীরে এই সাহিত্যমেলার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। আশাকরি আগামী দিনে এই সাহিত্যমেলা আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করবে । যেভাবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এই মেলার প্রসারে সহযোগিতা করে চলেছে তার জন্য তিনি সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আগামী দিনেও তাদের সহযোগিতা কামনা করেন ।।