এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৮ ফেব্রুয়ারী : কর্ণাটকে হিজাব বিতর্কের পর বাংলাদেশের উগ্র ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি রাজধানী ঢাকার রাস্তায় বিশাল মিছিল বের করেছিল । তাদের মুখে ছিল ‘আল্লাহু আকবর’ এবং ভারত বিরোধী শ্লোগান । প্রকাশ্য রাজপথে তাঁরা স্পষ্ট হুমকি দিয়েছিল ভারতে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পড়ে স্কুল-কলেজে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তার পরিনাম ভুগতে হবে বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুদের । দেশের হিন্দু মহিলাদের জীবন দুর্বিষহ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল জনৈক এক বাংলাদেশী ইসলামপন্থী । তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন,’একজন বাংলাদেশী হিন্দু মহিলাকেও শাখাঁ,সিঁদুর মতো ধর্মীয় প্রতীক পরে প্রকাশ্য রাস্তায় হাঁটতে দেওয়া হবে না । এছাড়া পুরুষদের ধুতিও পড়তে দেওয়া হবে না ।’ তাঁকে সমর্থন করতে দেখা গিয়েছিল আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সমস্ত মানুষজনদের ।
ইসলামপন্থীদের এই হুমকি যে নিছক কথার কথা ছিল না এবার তার প্রমান হাতেনাতে পাচ্ছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েরা । কারন অমুসলিম শিক্ষার্থীদেরও হিজাব পরে আসার ফরমান জারি করে দিয়েছে বাংলাদেশের যশোরের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল কলেজ(Ad-din Sakina Medical College) কর্তৃপক্ষ । ছাত্রীদের ভরতির সময় এই বিষয়ে লিখিত ‘সম্মতি’ নিচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ । কোনও পড়ুয়া হিজাব পরতে অসম্মতি প্রকাশ করলে তাদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ।
যদিও ২০১০ সালের ৪ অক্টোবর থেকে দেশের কাউকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট । কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই ওই মেডিকেল কলেজে হিজাব নিয়ে ফরমান জারি করায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট । মহাজোটের নেতৃত্ব জানিয়েছেন,যশোরের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার শেখ মহিউদ্দিনের পিতা শেখ আকিজ উদ্দিন একজন স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি ছিলেন । স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় হিন্দু শরণার্থীদের সম্পদ লুন্ঠনকারী আকিজ ও তাঁর পরিবার আদপে পাকিস্থান সমর্থক ও কট্টর হিন্দু বিদ্বেষী বলে পরিচিত । এই প্রকার পারিবারিক সংস্কারে বেড়ে ওঠা শেখ মহিউদ্দিন ছোট থেকেই ছিলেন কট্টর মানসিকতার । ছাত্রজীবনে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে জামাত ইসলামির ছাত্র সংগঠন নেতাও হয়ে উঠেছিলেন তিনি ।
তিনি ছাড়াও ওই মেডিকেল কলেজের আরও এক মালিক রয়েছেন । তিনি হলেন যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন । সাম্প্রদায়িক পরিবারে বড় হয়ে ওঠা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে । শেখ আফিল উদ্দিনের অমানবিক অত্যাচারে যশোরের শার্শা এলাকা থেকে কয়েক হাজার হিন্দু পরিবারকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছিল । শেষে ওই পরিবারগুলি ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতৃত্ব জানিয়েছে,সবার জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করে ওই মেডিকেল কলেজ আদপে আদালতের আদেশ অমান্য করেছে । কলেজ ভর্তির সময় এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘লিখিত সম্মতি’ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ । এই বিষয়ে তাঁরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিলম্বে হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ।
অন্যদিকে কলেজের প্রশাসনিক আধিকারিক সুব্রত বসাক দাবি করেছেন,হিজাবের নিয়মটি ২০১১ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কার্যকর রয়েছে । যদিও তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ।।