প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ ফেব্রুয়ারি : পুরভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে বলে দলীয় মুখপত্রে বার্তা দিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল । কিন্তু বাস্তবে রবিবার পূর্ব বর্ধমান সহ রাজ্যের বিভিন্ন পুর এলাকায় ঠিক তার উল্টোটাই ঘটলো।বুথ দখল,ছাপ্পা ভোট দেওয়া ,বিরোধী দলের এজেন্টের উপরে হামলা সবেতেই অভিযোগের আঙুল উঠলো শাসক দলের দিকে।এমন পুরভোট দেখে তিতিবিরক্ত ভোটাররাও ।
রাজ্যের যে ১০৮ টি পুরসভার নির্বাচন এদিন হয় তার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান, কালনা ,কাটোয়া,দাঁইহাট , মেমারি ও গুসকরা
পুরসভাও ছিল।এদিন ভোট শুরুর ঘন্টা খানেক বাদে গোলযোগ অশান্তি শুরু হয়ে যায় গুসকরা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে । গুসকরার শান্তিপুর পূর্ব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা ৬নম্বর ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি বুধে ব্যাপক গণ্ডগোল বেঁধে যায়। বহিরাগতরা বুধে ঢুকে তৃণমূলের হয়ে ছাপ্পা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলো স্বোচ্চার হয় সিপিএমের প্রার্থী ও এজেন্টরা ।একই অভিযোগ তুলে স্বোচ্চার হন এলাকার ভোটাররাও । পুলিশের বিরুদ্ধে নিস্কৃয়তার অভিযোগ তুলে তাঁরা সবাই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন । শুরু হয়ে যায় পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়া । ইটের আঘাতে চোট পান গুসকরা ফাঁড়ির আই সি অরুণ সোম সহ ৪ পুলিশ কর্মী । এপর পরেই পুলিশ লাঠি চার্য করে ও লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয় । এমন গোলযোগ অশান্তির জন্য প্রায় আধ ঘন্টা ভোট গ্রহন থমকে থাকে।গুসকরা পুরসভার ভোটে প্রতিদ্বন্দি সিপিএম,বিজেপি উভয় বিরোধী দলের প্রার্থী ও এজেন্ট দের অভিযোগ, বেলা বাড়তেই গুসকরা পুরসভার ১৬ টি ওয়ার্ডের সব বুথেরই দখল নিয়ে নেয় শাসক দলের বহিরাগত দুস্কৃতিরা।ওই দুস্কৃতিরা
বিরোধী দলের প্রার্থী, এজেন্ট ও ভোটারদের
বুথ থেকে বাইরে বের করে দিয়ে অবাধে ছাপ্পা দিয়ে গেছে।এমনই অভিযোগ এদিন করেছেন ,জেলা সিপিএম নেতা আলমগীর মণ্ডল ও গুসকরার বিজেপি নেতা পতিতপাবন হালদার । একই ভাবে এদিন কালনা পুরসভার একাধীক ওয়ার্ডেও এদিন গোলযোগ অশান্তির ঘটনা ঘটে ।কালনা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অম্বিকা মহিষমর্দিনী প্রাথমিক স্কুলের বুথের দরজা বন্ধ করে পুলিসের সামনেই তৃণমূলের হয়ে ছাপ্পা ভোট দেবার অভিযোগ ওঠে । সাংবাদিকদের ক্যামেরাতেও ধরা পড়ে ছাপ্পা ভোট দেবার ছবি । তা বুঝতে পেরেই মুখ ঢেকে বুথ থেকে ছুটে পালায় ওই ভুয়ো ভোটার ।ছাপ্পা চলাকালীন ওই বুথে ভোট দিতে গিয়ে
নিগৃহীত হয়ে এক ছাত্র বুথ চত্ত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।যদিও এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন,তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমী কারফা । কালনা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী শুভদেব হাজরা অভিযোগ করেছেন কালনার শশীবালা স্কুলের বুথ ভোট শুরুর আগেই তৃণমূল কর্মীরা মারধোর করে তাঁকে বুথ থেকে বের করে দেয় যদিও তৃণমূল প্রার্থী সুনীল চৌধুরী এই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন । কালনা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও ব্যাপক অশান্তি ছড়ায় । ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একাধীক বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়া নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সিপিএম প্রার্থী পিয়ালী মুখোপাধ্যায় সহ বাম নেতা কর্মীরা। পিয়ালীদেবী বলেন,ভোটের একদিন আগেই তৃণমূলের দুস্কৃতিরা তাঁকে ব্যাপক মারধোর করে ।মাথা ফাটিয়ে দেয় । আর এদিন ভোট শুরুর প্রথম থেকেই তৃণমূলের দুস্কৃতিরা বুথে বুথে ঢুকে ভোট লুঠ শুরু করে দেয় । বাইক বাহিনী হঠাৎ কালনার মহিষমর্দিনী গার্লস স্কুলের বুথে ঢুকে ইভিএম ভেঙে দেয় বলে সিপিএমের অভিযোগ । বাইক বাহিনী সিপিএম প্রার্থী ও কর্মীদের মারধোর করে বলে অভিযোগ । এইসবের জন্য ওই বুথে ভোট বন্ধ হয়ে যায় । খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছালে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায় । ভোট লুঠের জন্য পুলিশকে দায়ী করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সিপিএম প্রার্থী ও কর্মীরা । তাঁরা কালনার নিভূজি মোড়ে সড়পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে দেয় । পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে বাম কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক বচসা ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় । পরে পুলিশ জোর পূর্ব অবরোধ তুলে দেয় ।
মেমারি পুরসভার ভোটে তেমন কোন বড়সড় গোলযোগ আশান্তির অভিযোগ বিরোধীরা তোলেন না। তবে এদিন দুপুর ৩টে নাগাদ বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটে মেমারির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুরের ২১০ ও ২১২ নম্বর বুথে । বহিরাগতরা বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা ভোট দিতে গেলে বিরোধী দলের প্রার্থী , এজেন্ট ও ভোটাররা একজোট হয়ে তা রুখে দেয় । তা নিয়ে স্কুল চত্ত্বর উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি সামাল দেয় ।
বর্ধমান পৌরসভার ভোটেও নির্বাচনের নামে ব্যাপক ভোটলুঠ ও বুথে বহিরাগতদের দাপাদাপির অভিযোগ উঠেছে। পুর-নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে বিকালে বর্ধমান সদর মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেদেন বিজেপি নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।প্রার্থীরা প্লাকার্ড হাতে সেখান মাটিতে বসে পড়েন। তার আগে পুলিশের সাথেও বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বচসাও হয় ।পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় তার জন্য মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে বিরাট পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা।একই ভাবে ভোটগ্রহণের শেষে বর্ধমানের কার্জনগেটের সামনেও উত্তেজনা ছড়ায় ।এদিন সন্ধ্যায় কার্জন গেটের সামনে বিক্ষোভে সামিল হয় বাম বাম ছাত্র-যুব ও অন্যান্য গণসংগঠনের প্রতিনিধরা। তাঁরা অভিযোগ করেন ,পুরভোটে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য ভোট লুঠ করা হয়েছে । এই অভিযোগ তুলে বামেরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কুশপুতুল পোড়ায়। বিক্ষোভের শেষে দলের নেতা অমল হালদার বলেন,জেলার ৬ টি পুরসভার ভোটেই নিরব সন্ত্রাস ও ভোট লুঠ চলেছে । গোটা রাজ্যেই ভোট লুঠ হয়ে হয়েছে। মানুষকে ভোটদানে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদেই তারা পথে নেমেছেন। এই কর্মসূচি চলাকালীন কিছু উচ্ছৃঙ্খল বাম সমর্থক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কটু মন্তব্য করলে উত্তেজনা চরমে ওঠে । পরে অবশ্য উচ্চ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।তৃণমূলের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু বলেন,’যেমন সিপিএম তেমনই বিজেপি । সংগঠন নেই, জনসমর্থন নেই । শুধু অভিযোগ তুলেই বিরোধীরা পরাজয়ের গ্লানি ঢাকার কৌশল নিয়েছে ।’।