জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুর,২৬ ফেব্রুয়ারী :দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিঘাট এলাকায় দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে ঝিনুক থেকে চুন উৎপাদন করে আসছেন তামলি সম্প্রদায়ের ৫ পরিবারের সদস্যরা । মূলত চুন তৈরি করেই তাঁদের রুজিরোজগার হয় । কিন্তু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে চুন উৎপাদন করেও লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না উৎপাদকরা । বছরভর চুন উৎপাদন করতে গিয়ে একদিকে যেমন অকুত পরিশ্রম করতে হয় । তেমনি দিন দিন খরচের বহরও বেড়েই চলেছে । ফলে লাভ তো দূর অস্ত,সারা বছর পরিবারের খোরাক জোগাতে গিয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন ওই পরিবারগুলি । তাঁদের অভিযোগ,তাঁরা পান না কোনও সরকারি সহায়তা । তাঁদের দিকে ফিরেও তাঁকান না নেতা বা মন্ত্রীরা । দিনের পর দিন ধরে তাঁরা শুধু বঞ্চনার শিকার হয়েই আসছেন ।
ঝিনুকের খোলা পুড়িয়ে চুন উৎপাদন করা অত্যন্ত পরিশ্রম সাপেক্ষ কাজ ৷ পুরো পরিবারের সদস্যরা দিন রাত নাগাড়ে খেটে তবেই উৎপন্ন হয় খাওয়ার উপযোগী এই চুন । চুন প্রস্তুতকারী বিজয় তামলি, বিমল তামলিরা জানিয়েছেন,সারা বছর ধরে তাঁরা বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে ঝিনুক কিনে এনে সংগ্রহ করে রাখেন । ফলে ঝিনুক কেনা ও পরিবহনের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচা হয় । চুন তৈরির জন্য ২৪ ঘন্টা ধরে বড় বড় উনুনে পোড়ানো হয় ঝিনুকের খোল । ঝিনুকের খোল পুড়ে চুন তৈরি হলে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তাকে জল দিয়ে রেখে তিন ঘন্টা ঘোলাতে হয় । ওই চুন ঘোলা জল ছাঁকনি দিয়ে ছাঁকা হয় । তাকে ফের জল দিয়ে রেখে তিন ঘন্টা ঘোলাতে হয় । শেষে কাপড়ে ছেঁকে রাখার পর চুন সংগ্রহ করা হয় । তারপর সেটিকে তাঁরা প্যাকেট বন্দি করে গ্রামেগঞ্জে হাটেবাজারে বিক্রি করেন ।
সঞ্জয় তামলি নামে এক চুন প্রস্তুতকারী জানান,চুন বিক্রি করে সর্বসাকুল্যে মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হয় । কিন্তু ঝিনুক সংগ্রহ করতেই সেই টাকা চলে যায় । ফলে পরিবারের অভাব আর যায় না । সারা বছর ধরে টেনেটুনে সংসার চালাতে হয় ।
প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এই চুন শুধুমাত্র পানে খাওয়ার জন্য বিক্রি হয় । কিন্তু বর্তমানে পাথরের চুন বাজারে চলে আসায় তামলি পরিবারগুলির ব্যবসা মার খেয়েছে । সরকারি সহযোগিতা না থাকার ফলে তাদের লক্ষ্মীর ভাঁড়ে টান পড়েছে । তাই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে চুন উৎপাদনের এই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সাহায্যের করুন আর্জি জানিয়েছেন কাদিঘাটের তামলি সম্প্রদায়ের ৫ পরিবারের সদস্যরা ।।