নিজস্ব প্রতিনিধি,বর্ধমান,২০ ডিসেম্বর : রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের পুর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের চক্রান্তের কারণেই দলত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সদ্য বিজেপিতে যোগদানকারী মন্তেশ্বরের তৃণমূলের বিধায়ক সৈকত পাঁজা ! শুধু তাইই নয়, তাঁকে সরানোর চক্রান্ত করার জন্য তৃণমূল দলে থাকা তোলাবাজদের মদত ও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল বলে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন সৈকতবাবু । কয়েকদিন আগেই দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপিতে যোগদানকারী তৃণমূলের আরও এক বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু । তবে কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবুর অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কালনা পুরসভার প্রশাসক দেবীপ্রসাদ বাগ । কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের পুর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের বিরুদ্ধে সৈকত পাঁজার আনা এই অভিযোগকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে । যদিও তাঁর এই অভিযোগকে বিশেষ আমল দিতে রাজি নয় তৃণমূল নেতৃত্ব ।
সৈকত পাঁজার বক্তব্য শুনুন :
মেদিনীপুরে বিজেপিতে যোগদানের আগেই জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথ সহ উচ্চ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলে তৃণমূল ছাড়েন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু।ঠিক তারপর বিজেপিতে যোগ দিয়েই মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন মন্তেশ্বরের বিধায়ক সৈকত পাঁজা । সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া তার এমনিই এক ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেই চান্চল্য ছড়ায় সৈকত পাঁজার অনুগামীদের মধ্যে । সেই ভিডিওতে সৈকত পাঁজা বলেন,‘২০১৬ সালে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে।সেটাও আমার বাবা সজল পাঁজার হাত ধরে।তারপর ছয়-সাতমাস পর আমার বাবা মারা যান।তারপর দল আমাকে টিকিট দিলে সেখান থেকে আমি নির্বাচিত হই।প্রথম আট-নয় মাস ঠিকঠাকই চলে।তারপর থেকে একটার পর একটা চক্রান্ত একটা বিভ্রান্ত সৃষ্টি করার চেষ্টা।যারা তোলাবাজ,যাদের মুখ দিয়ে সোজা করে দলের নামটা উচ্চারণ হয় না,তাদেরকে ক্ষমতা দেওয়া,একটার পর একটা চক্রান্ত করে আজকে আমাকে বাধ্য করা হয়েছে।আমি ভারতীয় জনতা পার্টিতে সেইজন্য যোগদান করেছি।আর যতগুলো চক্রান্ত হয়েছে যা যা হয়েছে সব কিছুই হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের নির্দেশে বা তার নেতৃত্বে।’ সৈকত পাঁজার এই বিষ্ফোরক অভিযোগের পরেই স্বাভাবিক কারণেই বিধায়ক অনুগামীরা তৃণমূলের মন্ত্রীর এহেন আচরণে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ও তার নিন্দায় মুখর হোন।যদিও জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের বিরুদ্ধে এইভাবেই ফের মুখ খোলেন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু।রবিবার তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,‘ছাপ্পা মেরে ভোট করা থেকে,মীমাংসায় টাকা,বাড়ি তৈরীতে টাকা,পায়খানা তৈরীতে টাকা নেওয়ার বিরুদ্ধে তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথকে বারবার আমি জানালেও তাদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থাই নেননি।যারা চুরি চামারি করলো তাদের কোনো বিচার না করে তাদেরকেই বিভিন্ন পদে জেলা সভাপতি বসিয়ে দিয়েছেন।আমার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।’এই বিষয়ে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে ফোন করা হলে ওনার পি,এ ফোন ধরেন ও জানান উনি দলের সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।পরে ফোন করবেন।যদিও রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন,‘চক্রান্ত যদি করেই থাকে তাহলে এতদিন রাজ্য নেতৃত্বকে জানাননি কেন?আসলে ওই সবই হোলো বিজেপির শেখানো বুলি।আর সেই সবই আওড়াচ্ছে ওরা।’অন্যদিকে মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে থাকা বিধায়ক সৈকত পাঁজার দলীয় কার্যালয় দখল নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। রবিবারের এই ঘটনার কথা তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বীকার করলেও বিজেপি নেতা সৈকত পাঁজা বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে জানাবেন বলে জানান।