এইদিন ওয়েবডেস্ক,কুয়েত সিটি,২১ ফেব্রুয়ারী : যোগব্যায়াম ইসলামের পক্ষে ‘বিপদ’ । বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জিমনেশিয়াম । এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী ও অত্যন্ত জনপ্রিয় নৃত্য বেলিড্যান্সকে পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে । খর্ব করা হচ্ছে নারীদের স্বাধীনতা । ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের অঙ্গুলহেলনে নারী আন্দোলনকে দমন করছে দেশের সরকার । এক সময়ে প্রগতিশীল বলে গর্ব করা কুয়েত আজ কার্যত মৌলবাদীদের দখলে চলে গেছে । আর মুসলিম আইনপ্রণেতা ও ধর্মগুরুরা দেশটাকে ফেরাতে চাইছে মধ্যযুগে ।
গোটা বিশ্বজুড়ে আজ ভারতীয় যোগব্যায়াম ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । শরীর ও মন সুস্থ্য রাখতে ভারতীয় মুনি ঋষিদের প্রবর্তিত এই প্রাচীন পদ্ধতিকে অনুসরন করছে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশ । আর এই যোগব্যায়ামকে কেন্দ্র করেই মূলত কুয়েতে বিবাদের সুত্রপাত ।
জানা গেছে,চলতি মাসে কুয়েতের একজন মহিলা প্রশিক্ষক সুস্থতার জন্য মরুভুমিতে গিয়ে যোগব্যায়াম অনুশীলন করার একটি সফরের আয়োজন করেছিলেন । এনিয়ে তিনি বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলেন । ওই সফর ঘিরে মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল । কিন্তু মৌলবাদীরা যোগব্যায়ামকে ইসলামের উপর আঘাত হিসেবে ঘোষণা করে উন্মুক্ত স্থানে নারীদের পদ্মাসন,শীর্ষাসন বা শবাসনকে ইসলামের কাছে ‘বিপদ’ বলে দাবি করে বসে । শেষ পর্যন্ত কট্টপন্থীদের চাপে সফরটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার । আর এই যোগব্যায়ামের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হামদান আল-আজমী নামে এক মৌলবাদী নেতা । তাঁর দাবি, বহিরাগত সংস্কৃতি আরবের ঐতিহ্যকে পদদলিত করছে এবং এমন ব্যায়ামকে তিনি ‘সাংস্কৃতিক বিকৃতি’ হিসেবেও মন্তব্য করেছেন ।
প্রসঙ্গত,সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রক্ষণশীল আরব উপদ্বীপ জুড়ে নারী স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছে । সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে আন্দোলনে সফলও হয় সৌদির মহিলারা । এমনকি গত মাসে সৌদি আরবে খোলা আকাশের নিচে যোগ উৎসবের আয়োজন করেছিল । যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্রুপ করেছিল কুয়েতি কট্টরপন্থীরা । কুয়েতের নারীবাদী কর্মী নাজিবা হায়াতের কথায়,’আমাদের রাষ্ট্রের এমন দ্রুত হারে অধঃপতন আগে দেখিনি ।’ সেই সঙ্গে দেশে নারী স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন । উল্লেখ্য,কুয়েতে ২০২০ সালের নির্বাচনের পর থেকে রক্ষণশীল ইসলামপন্থী এবং উপজাতীয় সদস্যদের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ।
তারপর গত কয়েক মাসের মধ্যেই কুয়েতের কর্তৃপক্ষ একটি জনপ্রিয় জিমনেশিয়াম বন্ধ করে দেয় । কারণ সেখানে নাকি বেলিড্যান্স শেখানো হত । ধর্মগুরুরা পুলিশের দাবি করেছে,মরুভুমিতে গিয়ে যোগব্যায়াম অনুশীলনের আয়োজক সংস্থা “দ্য ডিভাইন ফেমিনিন”-এর কর্মকর্তাদের যেন অবিলম্বে গ্রেফতার করে সাজা দেওয়া হয় । সেই সঙ্গে কুয়েতের সর্বোচ্চ আদালতে নেটফ্লিক্স নিষিদ্ধ করার দাবিতে যে মামলা করা হয়েছিল তার শুনানি কিছুদিনের মধ্যেই হবে । নেটফ্লিক্স আরবী ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রটি প্রকাশ করলে কুয়েতে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায় । কট্টর ইসলামপন্থী ও মৌলবাদিরা দেশে নেটফ্লিক্সকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সরব হয় ।।