এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৯ ফেব্রুয়ারি : শারিরীক সমস্যার কারনে ওষুধের দোকানে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন বছর পৈঁত্রিশের(৩৫) এক গৃহবধু । দোকানদার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় নিজের সমস্যার কথা খুলে বলেন । আর বধুর এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাঁকে ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে আরও দুই সঙ্গীকে ডেকে নিয়ে এসে গনধর্ষন করল ওষুধের দোকানদার । শুধু তাইই নয়, প্রমান লোপাটের জন্য বধুর দেহ খন্ডখন্ড করে ওষুধের কার্টুনের মধ্যে ভরে ফেলে । পরিকল্পনা ছিল মাছের খামারে দেহাংশ ফেলে দেওয়া । কিন্তু তার আগেই তিন খুনিকে ধরে ফেললো পুলিশ । উদ্ধার হল ধর্ষিতা বধুর দেহাংশ । নৃশংস এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের ঢাকার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে । নিহত গৃহবধুর নাম শাহনাজ পারভীন জোৎস্না ।
পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম জিতেশ চন্দ্র গোপ (৩০),অনজিৎ চন্দ্র গোপ (৩৮) ও অসীত গোপ (৩৬)। ধৃতদের মধ্যে জিতেশ ওই বধুর পূর্ব পরিচিত ছিলেন । জগন্নাথপুর এলাকায় ‘অভি মেডিকেল হল’ নামে তাঁর একটি ওষুধের দোকান রয়েছে । বাকি দু’জনের বাড়ি যথাক্রমে কিশোরগঞ্জের ইটনা ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় । ঢাকার ভাটারার নুরের চালা এলাকা থেকে জিতেশকে এবং জগন্নাথপুর পৌর এলাকা থেকে অনজিৎ ও অসীতকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ।
জানা গেছে,জগন্নাথপুরের নারকেলতলা গ্রামের বাসিন্দা শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার স্বামী ছরকু মিয়া কর্মসুত্রে সৌদি আরবে থাকেন । ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথপুর পৌর এলাকায় নিজেদের বাড়িতে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন শাহনাজ । পরিবারের সমস্ত ওষুধ তিনি জিতেশের ফার্মেসি থেকে কিনতেন । সেই সুবাদে জিতেশের সঙ্গে শাহনাজের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । পরিবার সুত্রে খবর,শাহনাজ কিছুদিন ধরে গোপন রোগে ভুগছিলেন । এজন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে জিতেশের ফার্মেসিতে তিনি ওষুধ কিনতে এসেছিলেন । তারপর থেকেই উধাও হয়ে যান ওই বধু । রাতভর তিনি বাড়ি না ফেরায় পরের দিন সকালে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন শাহনাজ পারভীনের ভাই হেলাল আহমদ । অভিযোগে তিনি জিতেশ চন্দ্র গোপের নাম উল্লেখ করেন । অভিযোগ পেতেই ঘটনার তদন্তে নামে সিআইডির অপরাধ দমন শাখা ।
এদিন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে জিতেশ চন্দ্র গোপকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । জেরায় সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে । সন্দেহ হওয়ায় তার ওষুধের দোকানে তল্লাশি চালাতেই ওষুধের কার্টুনের মধ্যে নিখোঁজ মহিলার দেহাংশ দেখতে পাওয়া যায় । এরপর গ্রেফতার করা হয় জিতেশকে ।’
সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, জেরায় অভিযুক্ত কবুল করেছে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে তাঁর দোকানে আসেন শাহনাজ । মহিলা তাঁকে গোপন রোগের কথা বলে পরামর্শ চায় । এরপর জিতেশ মহিলাকে ওষুধ দেওয়ার নাম করে দোকান সংলগ্ন ঘরে বসিয়ে রাখে । তারই মধ্যে বন্ধু মুদিখানার দোকানদার অনজিৎ ও পাশের অরূপ ফার্মেসির মালিক অসীতে গিয়ে মহিলার কথা বলে জিতেশ । তখনই ৩ জনে মিলে মহিলাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে । এরপর জিতেশ দোকানে ফিরে এসে মহিলাকে একটি ওষুধ খেতে দেয় । মহিলা বিশ্বাস করে খেয়েও নেন । আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়েন মহিলা । রাতের দিকে দোকানের ঘরের মধ্যেই মহিলাকে তালাবদ্ধ করে বাড়ি চলে যায় জিতেশ । তারপর গভীর রাতে ৩ বন্ধু মিলে বধুকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে । পুলিশ সুপার জানিয়েছেন,ধর্ষকদের আশঙ্কা ছিল মহিলা বাড়ি ফিরে ঘটনার কথা বলে দিলে জনরোষের মুখে পড়তে হতে পারে । তাই তারা ধর্ষিতাকে খুন করে দেহ লোপাটের পরিকল্পনা করে । সেই কারনে তারা প্রথমে শাহনাজের পরনের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে এবং বিশ্রামকক্ষে থাকা বালিশ দিয়ে তাঁর মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করে । পরে মৃতদেহটি ধারাল ছুরি দিয়ে মাথা, দুই হাত, দুই পা এবং বুক-পেটসহ ৬ টুকরা করে। দোকানে থাকা ওষুধের কার্টুনের মধ্যে খণ্ডিত দেহাংশগুলো ভরে রাখে । পরেই দিন দেহাংশগুলি তারা স্থানীয় মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল । কিন্তু তার আগেই তারা ধরা পড়ে যায় ।।