এইদিন ওয়েবডেস্ক,চট্টগ্রাম,১৯ ফেব্রুয়ারী : আট বোন মিলে দেশ জুড়ে মাদক ব্যাবসার জাল ছড়িয়ে রেখেছে । তারা মূলত বার্মা থেকে চোরা পথে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ‘ইয়াবা’ এনে নিজের দেশে বিক্রি করে কামাচ্ছে কোটি কোটি টাকা । বাংলাদেশের ৮ বোনের শক্তিশালী এই মাদক সিন্ডিকেটটি পরিচালিত হচ্ছে মূলত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে । এতদিন ধরে বাংলাদেশের পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) মিলে তাঁদের টিকি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি । ওই আট বোন মিলে পুলিশ ও র্যাবকে কার্যত ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে । শেষ পর্যন্ত ১৯ হাজারটি ইয়াবা ট্যাবলেটসহ চট্টগ্রামে র্যাব-৭ এর হাতে গ্রেফতার হল ৩ বোন । ধৃতদের নাম ফাতেমা বেগম,হালিমা ও আসমা ।
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রামে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম ইউসুফ এনিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছে, এই প্রথম জানা গেলে বাংলাদেশে মাদক পাচারে সক্রিয় রয়েছে ৮ বোনের একটি সিন্ডিকেট । তাঁদের মধ্যে ৩ জন চট্টগ্রামে ধরা পড়েছেন । জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ইয়াবা চোরাচালানের চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছেন । তবে তাঁরা এখনও বাকি ৫ বোনের নাম ঠিকানা বলেননি ।
লেফেটেন্যান্ট কর্নেল এসএম ইউসুফ বলেন, ‘ফাতেমাদের ৮ বোনের সবাই এই ব্যবসায় পাকাপোক্ত । প্রথমে বহনকারী হিসেবে কাজ করলেও এখন নিজেরাই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে । শুক্রবার ৩ বোন মিলে কচুরমুখির ভেতরটা ফাঁপা করে তাতে ইয়াবা ঢুকিয়ে বিশেষ আঠা লাগিয়ে মুখ বন্ধ করে বিশেষ কায়দায় কক্সবাজার থেকে ১৯ হাজার ইয়াবা পাচার করছিল । আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্ট এড়াতে প্রথমে কক্সবাজারের চকরিয়া হয়ে আলীকদম, থানচি হয়ে তাঁরা যান বান্দরবানে । সেখান থেকে রাজস্থলী, চন্দ্রঘোনা হয়ে চট্টগ্রামের গন্তব্যে পৌঁছান । আর তখনই অভিযান চালিয়ে তাঁদের হাতেনাতে পাকড়াও করে র্যাব ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা নিজেদের বাড়ি কক্সবাজারের রামুতে বলেছেন । কিন্তু জানা গেছে তাঁদের বাড়ি আদপে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেতবনিয়ার কুলালপাড়ায় । ধৃতদের বাবা নুর আহমদ অনেক দিন আগেই মারা গেছেন । বাবার মৃত্যুর পর ৮ বোন মিলে মাদক পাচারের ব্যাবসায় পাকাপাকি ভাবে নেমে পড়েন । নিজেদের মধ্যে এলাকা ভাগ করে নিয়ে মাদক সিন্ডিকেটের ব্যাবসা চালাতে শুরু করেন । ঘুমধুম ইউনিয়নের নোয়াপাড়ার সিন্ডিকেট প্রধান ধৃতদের এক বোন সেলিনা আক্তার । কিন্তু ধৃত ৩ বোন চট্টগ্রামে থাকা অপর বোন মনোয়ারা বেগমের পরিচালিত ইয়াবা কারবারি সিন্ডিকেটের সদস্য ।
র্যাব সুত্রে জানা গেছে,ওই ৮ বোন ইয়াবা পাচারের জন্য একেক সময় একেক নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করেন । গত কয়েক বছর ধরেই নির্বিঘ্নে ইয়াবা পাচারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা । অল্প দিনেই তাঁরা বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে উঠেছিলেন । কিন্তু চট্টগ্রামের মত জায়গায় পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে মাদক পাচার চক্র গড়ে ওঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । স্থানীয়দের দাবি,যদি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হয় তাহলে পিলে চমকানোর মতো অনেক রাঘব বোয়ালদের নাম ও অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে ।
কি এই ইয়াবা ? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন,এটি আদপে মেথঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইন এর মিশ্রণে তৈরি । ট্যাবলেটের আকারে এই মাদক মূলত বার্মায় তৈরি হয় । থাইল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয় এই ট্যাবলেট । মাদাক পাচারকারীরা বার্মা থেকে চোরা পথে সেদেশে ইয়াবা পাচার করে মোটা টাকা মুনাফা কামায় । সম্প্রতি বাংলাদেশের যুব সমাজের মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ট্যাবলেটটি । আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশের মাদক পাচারকারীরা । কিন্তু পুলিশ ও র্যাবের তৎপরতার কারনে বিপাকে পড়তে হচ্ছে পাচারকারীদের । তাই এই ট্যাবলেট পাচারের জন্য তারা নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে । সম্প্রতি বাংলাদের ৮ পড়ুয়া ধরা পড়েছিল র্যাবের হাতে । যাদের পেটের ভিতর থেকে বিপুল পরিমান ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয় । এবার কচুরমুখির ভেতরে ইয়াবা ভরে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ল ৮ বোনের মাদক সিন্ডিকেটের ৩ সদস্যা ।।