এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,১৮ ফেব্রুয়ারী : এবারের পুরভোটে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন জনৈক এক বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী । বৃহস্পতিবার রাতে এলাকার এক পরিচিতের বাড়িতে বসে বৈঠক করছিলেন তিনি । আর ওই বৈঠক ঘিরে অশান্তির সৃষ্টি হল বাঁকুড়া শহরের শীটপুকুর লেন এলাকায় । নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ তুলে ওই বাড়ির সামনে সদলবলে চড়াও হন তৃনমূলের যুব নেতা শ্যামসুন্দর দত্ত । আঙুল উঁচিয়ে বাড়ির মালিককে দেখে নেওয়ায় হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ওই নেতার বিরুদ্ধে । বাড়ির মালিক সুরজিৎ লাহা তৃণমূল নেতার ‘দাদাগিরি’তে ভয় পেয়ে পিছু হটেন । যদিও টাকা বিলির অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন নির্দল প্রার্থী ছায়া পাত্র । তাঁর অভিযোগ, মনোনয়ন তুলে নেওয়ার তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে এভাবে নিয়মিত হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে । যদিও এই ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত থানায় নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গেছে । ঘটনা ঘিরে জেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ।
জানা গেছে,এবারে বাঁকুড়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা করেছেন বিক্ষুব্ধ তৃনমূল নেত্রী ছায়া পাত্র । ওই ওয়ার্ডে তৃনমূলের প্রার্থী করা হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী ঝিল্লি দত্তকে । বৃহস্পতিবার রাতে শীটপুকুর লেনের একটি বাড়িতে কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে বৈঠক করছিলেন ছায়াদেবী ।
স্থানীয় সুত্রে খবর,ছায়াদেবীর বিরুদ্ধে ওই বাড়িতে বসে মহিলাদের টাকা বিলির অভিযোগ তুলে তৃনমূল প্রার্থী ঝিল্লি দত্তসহ তৃনমূলের একদল নেতা ও কর্মী ওই বাড়ি ঘেরাও করে রাখে । খবর পেয়ে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এইসময়ই বাঁকুড়া শহরের তৃনমূলের যুব নেতা শ্যামসুন্দর দত্তকে ওই বাড়ির মালিককে শাসাতে দেখা যায়। আঙুল উঁচিয়ে ওই যুব তৃনমূল নেতা বাড়ি মালিক সুরজিৎ লাহাকে বলেন, ‘ আপনার বাড়ির চাবি দিন । চাবি আপনি থানা থেকে নিয়ে আসবেন ।’ সুরজিতবাবু এর প্রতিবাদ করলে তৃণমূল নেতা তাঁকে শাসান, ‘বেশি ডায়লগ মারবেন না । দাদা এটা তৃণমূল । আপনি ভুল করছেন । বাড়ির চাবি লাগিয়ে আমায় দিন । থানায় দিয়ে দেবো । কবে বাড়ি খুলবে জানি না । যত আইন আছে করে নেবেন । তখন আপনার পিছনে কোনও মাতব্বর থাকবে না, দাদা । কেউ পাশে থাকবে না । ফেঁসে যাবেন । আমি বলে দিলাম ।’ এরপর খতিয়ে দেখার জন্য এক মহিলা কর্মীকে সোজা বাড়ির ভিতরে পাঠিয়ে দেন ওই তৃণমূল নেতা । এই সব দেখে শুনে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন বাড়ির মালিক ।
এদিন তৃণমূল নেতার এহেন ‘দাদাগিরি’র খবর চাওড় হতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে বাঁকুড়া জেলা জুড়ে । স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন,যদি ওই নির্দল প্রার্থী সত্যিই টাকা বিলি করে থাকেন তাহলে পুলিশ বা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ না জানিয়ে কেন শাসাতে গেলেন ওই তৃণমূল নেতা ? এটাও কি নির্বাচনের বিধিভঙ্গ নয় ? যদিও শ্যামসুন্দর দত্তর কথায়,’আজ টাকা বিলি করছে কাল বোমা পিস্তল বিলি করা হবে। এটা বরদাস্ত করা হবে না। এলাকার মানুষ তা হতে দেবে না । সেকারনেই বাড়ির মালিককে বলা হয়েছে । কাউকে শাসানো হয়নি ।’
অন্যদিকে নির্দল প্রার্থী ছায়া পাত্র বলেন, ‘আমি পুরসভার তিনটি ওয়ার্ডে স্বনির্ভর গোষ্ঠী দেখাশোনার কাজ করি । সেই গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে তাঁদের ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে ওই বাড়িতে বসে বৈঠক করছিলাম । কোনো টাকা বিতরণ করা হয়নি।’ সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই আমাকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল । যাতে আমি ভয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিই । তৃণমূলের লোকজনের আতঙ্কে আমার স্বামী কাজে যেতে পারছেন না । আমি ভোটের প্রচারও সেভাবে করতে পারছি না । চরম আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের ।’
ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা পার্থ সারথি কুন্ডু বলেন, ‘তৃনমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে কোন পর্যায়ে গেছে তা এই ঘটনাতেই প্রমানিত । তবে শুধু বিক্ষুব্ধ তৃনমূল প্রার্থীই নয়,পুরভোটের আগে বিরোধী দলগুলিকেও একই ধরনের হুমকি ও শাসানির মুখে পড়তে হচ্ছে ।’।