এইদিন ওয়েবডেস্ক,পশ্চিম মেদিনীপুর,১৯ ডিসেম্বর : ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’- বিজেপিতে যোগদানের পর এমনই হুঙ্কার ছাড়লের শুভেন্দু অধিকারী । শনিবার মেদিনীপুর কলেজ ময়দানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র অমিত শাহের জনসভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেন শুভেন্দু । যোগ দেন তাঁর অনুগামী সাংসদ,বিধায়কসহ বিভিন্ন জেলার একাধিক নেতা । শুভেন্দুর হাতে পতাকা তুলে দেন অমিত শাহ । তারপর একে একে তাঁর অনুগামী তৃণমূল নেতাদের হাতে বিজেপির দলীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয় ।
যোগদানের পর সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘গত কাল তৃণমূলের এক পুরনো বন্ধু একটা ভিডিও পাঠালেন । লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কর্মী হিসাবে ‘বিজেপি হঠাও ভারত বাঁচাও’ শ্লোগান দিয়েছিলাম । সেইটা পাঠিয়েছেন আমাকে । আমি নিচে লিখলাম বন্ধু আমি যখন যা করি নিষ্ঠার সঙ্গে করি । তৃণমুলের কর্মী ছিলাম তৃণমূলের হয়ে করেছি । কালকে যাচ্ছি মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে । সেখানে গিয়ে বলবো ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ ।
এদিন পুরনো দলের বিরুদ্ধে একরাশ অভিমান ঝড়ে পড়ে শুভেন্দুর গলায় । তিনি বলেন, ‘যখন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম আমার দলের লোকেরা খোঁজ নেয়নি। অমিতজী আমার খোঁজ ২ বার নিয়েছিলেন । তার জন্য তাঁকে আমি কোটি কোটি নমন জানাই।’
পুরনো দলকে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, ‘আমায় বিশ্বাসঘাতক বলছে । কারা বলছে? যারা ৯৮ সালে তৃণমূল প্রতিষ্ঠার পর অটলজীর আশীর্বাদ না পেলে বাড়ি থেকে বেরুতে পারতেন না ৷ তারাই তখন এনডিএর জোটে ছিলেন।’ এরপর তিনি বলেন, ‘আবার বলছে মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে । মা কে? যিনি গর্ভধারিনী, আমার জন্ম দিয়েছিলেন । তিনি আমার মা। অন্য কেউ আমার মা নন । আর একটা মা আছে, ভারত মাতা ।’ দলত্যাগ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘যেখানে আস্থা নেই। যেখানে বিশ্বাস নেই। যেখানে সম্মান নেই । সেখানে থাকবো না । এটাই আমাদের মেদিনীপুরের গর্ব ।’
অমিত শাহসহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘বহিরাগত’ আক্ষা দেওয়া নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর সমালোচনা করে শুভেন্দু বলেন, ‘আগে আমরা ভারতীয়, তারপর বাঙালী । এই বহুত্ববাদ নষ্ট করতে আমরা দেবো না ।’ সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলো রাজ্যে লাগু না করা ও নাম বদলে ফেলার অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু ।
এরপর শুভেন্দু বলেন, ‘আমি মনেপ্রানে চাই কলকাতা ও দিল্লিতে একই সরকার থাকুক । নইলে বাংলা বাঁচবে না । অর্থনীতি শেষ হয়ে গেছে৷। বেকারদের চাকরি নেই । ৪ হাজার ২ হাজার টাকার চাকরি । এসএসসির নিয়োগ নেই । টেটের দুর্নীতি । এটা থেকে যদি বেরিয়ে আসতে হয় তাহলে যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে বাংলাকে তুলে দিতেই হবে ।’
এদিন তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, ‘কয়েকদিন আগে এই মাঠেই সভা করে বলে গিয়েছিলেন দল গঠনের পর কাঁথিতে লড়ে আমরা দ্বিতীয় হয়েছিলাম । উদ্দেশ্য, অধিকারীদের বাদ দিয়েই নাকি দ্বিতীয় হয়েছিলেন। হ্যাঁ,এবারেও আপনি দ্বিতীয় হবেন । প্রথম হতে পারবেন না । প্রথম বিজেপি হবে । সরকার তৈরি করবে ।’এরপর তিনি দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আর এই কাজটা করার জন্য আপনাদের সঙ্গে আমি কাল থেকেই নেমে পড়বো ।’
তবে তার আগে নতুন দলের স্থানীয় নেতাদের আশ্বস্ত করে শুভেন্দু বলেন, ‘আপনাদের উপর মাতব্বরি করার জন্য শুভেন্দু বিজেপিতে আসেনি । একজন কর্মী হিসাবে পার্টির নির্দেশ মেনে কাজ করবো।’
এদিন শুভেন্দু অধিকারীর পর বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । তিনি রাজ্যে সন্ত্রাস ছাড়াও রাজ্যের কৃষকদের কেন্দ্রীয় অনুদান না পাওয়া ও আয়ূষ্মান ভারত প্রকল্প লাগু না করার জন্য তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেন । পাশাপাশি ক্রম বর্ধমান বেকারত্ব নিয়েও রাজ্য সরকারকে খোঁচা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ।।