অভিষেক চৌধুরী,কালনা,১৯ ডিসেম্বর : দিন দুয়েক আগে নিজের দলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দিয়ে পুরসভা দখলের মত গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন । দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন পুর প্রশাসকের বিরুদ্ধেও । এবার দলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতে চলেছেন কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু । শনিবার সকালে এনিয়ে জানতে বিশ্বজিৎবাবুকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো বিজেপিতে যোগ দিতাম না। বাডিতেই থাকতাম । কিন্তু সৌগত রায় নাকি বলেছেন আমি ওনাকে তিনবার ফোন করেছি। অথচ আমি একবারও ফোন করিনি । এই মিথ্যাচার দেখে আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি । আজ আমি মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছি ।’ উল্লেখ্য,এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মেগা শো । ওই শোয়ে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে নাম লেখাতেন চলেছেন বলে খবর । সেই দলে নতুন সংযোজন কালনার তৃণমূল বিধায়ক ।
দলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার পর গত বুধবার তৃণমূল সাংসদ সুনীল মন্ডলের কাঁকসার বাড়িতে একটি বৈঠক করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । ওই বৈঠকে উপস্থিত কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু । বৈঠকের পরের দিনই কালনায় দলীয় কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবু । কালনা পৌরসভার একসময়ের চেয়ারম্যান বর্তমানে পুরপ্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগ,প্রশান্ত কিশোরসহ তৃণমূলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে তিনি তোপ দাগেন । তাঁর অভিযোগ ‘দলের শুদ্ধিকরণের জন্য অনেক টাকা খরচ করে প্রশান্ত কিশোরকে যে নিয়ে আসা হোলো সেই শুদ্ধিকরণের জায়গায় অশুদ্ধি বেশি হয়েছে।সেইটা যদি শুদ্ধিকরণের জায়গায় আসে তা চিন্তভাবনা করে দেখবো।’
তৃণমূল হাইকম্যান্ডের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি বলেন,‘এর আগেও এই সব বিষয়ে ববি হাকিম,অরূপ বিশ্বাস,স্বপন দেবনাথ,উজ্বল প্রামাণিককে জানানো হয় । অভিষেকের সিএ কে দেওয়া হয়েছে। দশদিন ধরে ফোন করেছি ।অভিষেকের সঙ্গে পাঁচ মিনিটের জন্য কথা বলার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও তা দেওয়া হয়নি।’
সেই সঙ্গে কালনার পুরপ্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিশ্বজিৎবাবু বলেন,‘২০১৫ সালে যে ছাপ্পা মেরে ভোটে জিতেছে।যে গোটা কালনা শহরে বিভীষিকার মতো কাজ করে রেখে দিয়েছে।যেখানে মানুষ বিচার-আচারের জায়গায় নেই।যেখানে যত জায়গা জমি যা বিক্রি হবে সব সে কিনবে । তাঁকে চেয়ারম্যান বা সভাপতি হিসাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’
প্রসঙ্গত,কিছুদিন আগেই কালনা শহর তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে বিশ্বজিৎ কুন্ডুকে সরিয়ে দিয়ে সভাপতি করা হয় দেবপ্রসাদ বাগকে । যদিও এরপরেই তৃণমূল নেতৃত্ব বিশ্বজিৎবাবুকে রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই করে দেয় । তাতেও কিন্তু বরফ গলেনি বরং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চোরা স্রোত বেড়েই যায় । তারপর শুভেন্দু অধিকারী দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার পরেই সেই স্রোত সুনামির আকার নেয় । এদিকে কালনার বিধায়কের বিদ্রোহের জেরে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমুলের পুর্ব বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব ।।