এইদিন ওয়েবডেস্ক,চট্টগ্রাম(বাংলাদেশ),১৩ ফেব্রুয়ারী : গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় দ্রুত গতির একটি পিক আপ ভ্যানের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল ৫ ভাইয়ের । আহত আরও ৩ ভাইবোন । প্রথম দিকে বিষয়টি দূর্ঘটনা বলে প্রচার করা হলেও, শুক্রবার নিহতদের পারলৌকিক কাজ মিটতেই গুরুতর অভিযোগ তুললেন নিহতদের পরিবারের লোকজন । তাঁদের অভিযোগ, সম্প্রতি বাড়িতে একটি দূর্গামন্দির তৈরি করার প্রস্তুতি চলছিল । আর সেই অপরাধেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হল ৫ ভাইকে । একই দাবি করেছেন বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজারের সভাপতি দীপঙ্কর বড়ুয়া ও সম্পাদক প্রিয়তোষ শর্মা।
জানা গেছে,দিন দশেক আগে হৃদরোগে মারা যান নিহতদের বাবাবহাসিনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুরেশ চন্দ্র সুশীল । ঘটনার দিন বাবার শেষকৃত্যের অংশ হিসাবে পরিবারের সাত ছেলে এবং দুই মেয়েকে ভোরে পূজার জন্য নিকটবর্তী একটি মন্দিরে যেতে হয়েছিল । ভোর ৫ টার দিকে তাঁরা মন্দির থেকে ফেরার সময় দ্রুতগামী পিকআপ ভ্যান তাদের চাপা দেয় । এরপর গাড়িটি দ্রুত কক্সবাজারের দিকে চলে যায় । হামলায় সাত ভাই আহত হন এবং তাদের মধ্যে ডাঃ অনুপম সুশীল (৪৭), নিরুপম সুশীল (৪৫), দীপক সুশীল (৪০), চম্পক সুশীল (৩০) এবং স্বরণ সুশীল (২৪) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান । আহত হয়েছেন আরও ৩ জন । আহতদের মধ্যে মৃতদের আর এক ভাই রক্তিম সুশীল বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে । অপর দুই ভাইবোন প্লাবন সুশীল ও মুন্নি সুশীলের অবস্থা স্থিতিশীল ।
দূর্ঘটনায় অন্যতম জীবিত সদস্য মুন্নি সুশীলের মতে, ‘সড়ক দুর্ঘটনাটি আসলে পূর্ব পরিকল্পিত খুন । কারন আমার ছয় ভাই এবং এক বোন দুর্ঘটনার দিন রাস্তা থেকে প্রায় দুই হাত দূরে ছিল । আমি এবং আমার অন্য ভাই রাস্তায় ছিলাম । পিকআপ ভ্যানটি আমাদের ধাক্কা না দিয়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা আমার ভাইদের পিষে দেয় । এরপর গাড়িটি ফের ফিরে এসে আমার ভাইদের শরীরের উপর দিয়ে গিয়ে হত্য
আমার আহত বোনকে পিষে ফেলে ।’
সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে মাত্র ৩০-৩৫ টি হিন্দু পরিবার বসবাস করে । বাকি সব মুসলিম। তা সত্ত্বেও আমার বাবা গত দশ বছর ধরে বাড়িতে দুর্গাপূজা করছিলেন । সম্প্রতি একটি দূর্গামন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । সেই কারনে আমার এক ভাই দীপক সুশীল গত জানুয়ারি মাসে মন্দির নির্মাণের জন্য ইট ও পাথর আনিয়েছিলেন । আর তার পর থেকেই আমার বাবাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল । এরপর গত ২৯ জানুয়ারী ৪০-৫০ জনের একটি উন্মত্ত দল আমাদের বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে হামলা করে । বাবাকে খুনের হুমকি দেয় । আর তার পরের দিনেই আমাদের বাবা হৃদরোগে মারা যান । তাই আমাদের সন্দেহ আমার ৫ ভাইকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করা হয়েছে ।’
নিহতদের মা মৃণালিনী সুশীল কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার সন্তানরা কখনও কারোর ক্ষতি করেনি । তাহলে কেন আমার পাঁচ সন্তানকে এভাবে খুন করা হল ? আমার নাতিনাতনিরা খুবই ছোট । এখন কিভাবে ওদের মানুষ করবো ?’
এদিকে ঘটনার পর জীবিত ভাই প্লাবনচন্দ্র সুশীল চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন । হাইওয়ে পুলিশ ওই দিনই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানটি উদ্ধার করে । শুক্রবার রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঘাতক চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে । সাইফুলের দাবি করেছে,দৃশ্যমানতা কম থাকার কারনে দেখতে না পাওয়ায় দূর্ঘটনাটি ঘটেছে । তাহলে কেন সে ফের ফিরে এসে আহতদের পিষে দিলো ? এর উত্তরে সে জানায়, গাড়ির মালিকের নির্দেশেই সে গাড়ি পিছিয়ে নিয়ে যায় । পুলিশ গাড়ির মালিক মাহমুদুল করিমের সন্ধান চালাচ্ছে । এদিকে গাড়ির চালকের এহেন যুক্তিকে মনগড়া বলে দাবি করেছেন নিহতদের পরিবার ও হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা ।।