দিব্যেন্দু রায়,বর্ধমান,১৩ ফেব্রুয়ারী : জন্মের পর থেকেই খাঁচা বন্দি ছিল ১০-১২ টি মুনিয়া । খাঁচার মধ্যে তাদের চিকিরমিচির শব্দ মুক্তির আকুতির মত শোনাতো সদ্য স্নাতকোত্তর পাশ করা তরুনীর কাছে ৷ তাই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন নিজের জন্মদিনে ছোট্ট সুন্দর ওই পাখিগুলিকে মুক্ত করে দেবেন । সেই ভাবনায় শনিবার নিজের ২৩ বছর পূর্তির দিনে পাখিগুলিকে মুক্ত করে দিলেন বর্ধমান শহরের ২ নম্বর ইছালাবাদের বাসিন্দা অঙ্কিতা কর্মকার । আর অঙ্কিতার কল্যাণে এই প্রথম খোলা আকাশে পাখনা মেললো ছোট্ট পাখিগুলি । সেই সঙ্গে তিনি পেট পুরে খাওয়ালেন বেশ কিছু পথ কুকুর, বিড়াল ও গরুকে । তরুনীর এই প্রকার পশুপাখি প্রেম নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর । সকলে একবাক্যে প্রশংসা করেছেন ওই তরুনীর ।
জানা গেছে,ইছালাবাদের বাসিন্দা অশোক কর্মকারের একমাত্র মেয়ে অঙ্কিতা । অঙ্কিতা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন । অশোকবাবু জানিয়েছেন,ছোট থেকেই পশুপাখির প্রতি খুব মায়া মমতা ছিল তাঁর মেয়ের । বয়স বাড়লেও সেই অভ্যাস থেকে গেছে । তিনি বলেন, ‘কিছু দিন ধরেই মেয়ে বলছিল এবারের জন্মদিন বর্ধমান সোসাইটি ফর অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ারের অফিসে গিয়ে পালন করবে । কিন্তু তখন কারন বুঝতে পারিনি । আজ বুঝতে পারলাম ওই পাখিগুলি মুক্ত করতে ও কিছু পথ কুকুর ও বিড়ালকে খাওয়ানোর জন্য অঙ্কিতা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।’
জানা গেছে, জন্মদিন পালনের বিষয়টি আগে থেকেই বর্ধমান সোসাইটি ফর অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ারের সদস্য অর্নব দাসকে জানিয়ে রেখে দিয়েছিলেন অঙ্কিতা । খরচ খরচার জন্য সংস্থাকে টাকাও দিয়ে রেখেছিলেন । তারপর এদিন সকালের দিকে স্নান ও পূজো পর্ব সেরে সোজা সংস্থার অফিসে চলে আসেন ওই তরুনী । প্রথমে মুনিয়াগুলিকে পেটপুরে খাওয়ান । তারপর খাঁচার দরজা খুলে তাদের মুখ করে দেন অঙ্কিতা । মুনিয়াদের মুক্তির পর সংস্থার সদস্যদের সহায়তায় ৩৬ টি কুকুর,১২ টি বিড়াল ও ৪ টি গরুকে নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করেন । কুকুরদের জন্য ছিল ভাত ও মুরগির ঝোল । বিড়াল মৎস্য ও দুধ প্রেমী । তাই তাদের জন্য মাছ ও দুধের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল । গরুগুলির জন্য ছিল টাটটা কিছু শাকশব্জি । সব শেষে কিছু বৃক্ষরোপণও করেন ওই তরুনী ।
অঙ্কিতা কর্মকার বলেন, ‘খাঁচাবন্দি ছোট্ট মুনিয়াগুলিকে দেখে খুব কষ্ট হত । ওদের কিচিরমিচির শুনে কেবল মনে হত খাঁচা থেকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য ওরা আকুতি জানাচ্ছে । তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার জন্মদিনে ওদের মুক্ত করে দেবো । এছাড়া কিছু অসহায় কুকুর বিড়ালের একবেলা খাওয়ার ব্যাবস্থা করব । বিষয়টি অর্ণব দাসকে বলেছিলাম । এদিন উনি ও ওনার সংস্থার সদস্যরা সব কিছু খুব সুন্দরভাবে আয়োজন করেছিলেন । এজন্য সংস্থার প্রত্যেক সদস্যকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই ।’।