এইদিন ওয়েবডেস্ক,উদুপি(কর্নাটক),১১ ফেব্রুয়ারী : ‘হিজাব বিতর্ক’ কলেজের মধ্যে মুসলিম ও অমুসলিম ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্নাটকের উদুপির সরকারি কলেজের প্রতিবাদী হিন্দু সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা । তাঁরা দাবি তুলেছেন কলেজে সকলের জন্য অভিন্ন পোষাক বিধি(uniform dress code) চালু করা হোক । এদিকে পিএফআই এবং জামায়াত-ই -ইসলামী হিন্দ সমর্থিত মুসলিম ছাত্রীরা ইউনিফর্ম ড্রেস কোডের নিয়ম লঙ্ঘন করছেন । তাঁরা বোরখা পরে ক্লাসে যাওয়ার দাবিতে অনড় । উদুপির কলেজ কর্তৃপক্ষ মেয়েদের কলেজের মধ্যে ড্রেস কোড অনুসরণ করতে অনুরোধ করলেও মুসলিম ছাত্রীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা নয়, ‘হিজাব’ তাঁদের প্রথম পছন্দ । আর মুসলিম ছাত্রীদের এই অনড় মানসিকতার মাঝে কিছু রাজনৈতিক দল হিজাবের দাবিকে সমর্থন করে বিতর্ক আরও উসকে দিচ্ছে । ফলে কর্ণাটকে চলমান ‘হিজাব বিতর্ক’-এর আসু সমাধান নজরে পড়ছে না । তাই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে কর্নাটক হাইকোর্টের দিকে । বৃহস্পতিবার আদালত একটি অন্তবর্তী আদেশে আদালত স্কুল কলেজ খোলার নির্দেশ দিলেও শিক্ষা প্রাঙ্গনে কোনও প্রকার ধর্মীয় পোশাক পড়ে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ।
এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তুলেছেন উদুপির সরকারি কলেজের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবাদী ছাত্রীরা । মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে এক ছাত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘যদি সরকার ক্যাম্পাসের ভিতরে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরার অনুমতি দেয় তাহলে তারা কি বৈষম্যের সম্মুখীন হবে ?’ তাঁর কথায়,’তাঁরা(মুসলিম মেয়েরা) দাবি করে যে পুরুষ ছাত্রদের কুনজর এড়াতেই নাকি হিজাব পড়তে হয় তাঁদের । তাহলে আমরাও কি মেয়েরা নই ? আমাদের কি সুরক্ষা দরকার নেই ? হিন্দু মেয়েদের কি হবে ?’
অন্য এক ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তাহলে সমস্ত ছাত্রদের জন্য অভিন্ন পোশাক বিধি করার উদ্দেশ্য কী ? কলেজ বা স্কুলে সব ছাত্রছাত্রী সমান । যদি তাদের (মুসলিমদের) হিজাব পড়তে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে আমরাও গেরুয়া ওড়না,শাড়ি, কুমকুম এবং ফুল পড়ে কলেজে আসব ।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আশা করব আদালত ন্যায়বিচার করবে । মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাবে না । কলেজের বাইরে বা এমনকি বাড়িতেও মুসলিম মেয়েদের হিজাব বা বোরখা পরা নিয়ে আমরা কোনও আপত্তি করছি না । কিন্তু ক্যাম্পাসে, ইউনিফর্ম ড্রেস কোড সব ছাত্রছাত্রীদের অনুসরণ করতে হবে ।’
উদুপির কলেজের প্রতিবাদী হিন্দু ছাত্রীরা এক বাক্যে বলেন,’ওদের হিজাব পরতে দিন । আমরা এর বিরুদ্ধে নই । তবে ক্যাম্পাস এবং ক্লাসের ভিতরে এটি পরতে দেওয়া উচিত নয় । আমরা তাদের সাথে সম্মান এবং সমতার মনোভাব রেখে চলি ও চলবও । আমরা হিন্দু বা মুসলমানের মধ্যে ভেদাভেদ করি না । আমরা কি কখনও ধর্মের ভিত্তিতে ওদের পৃথক করে রেখেছি ? করিনি । ওদের সাথে আমরা বন্ধুত্ব করি । তাহলে কেন ওরা হিজাব বিতর্ক তুলে বিভেদের সৃষ্টি করছে ?’
এরপর তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘এত কিছুর পরেও ওরা যদি স্কুল কলেজে হিজাব পড়ে আসার জন্য জিদ করে তাহলে আমরাও গেরুয়া বস্ত্র পড়ে আসব । আমাদেরও ধর্ম মেনে চলার অধিকার আছে । তাই হিজাব পরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করবে । আমরা যখন ক্লাসে একসাথে বসি, তখন সমতার অনুভূতি থাকা উচিত । আমরা সবাই বন্ধু । ক্লাসের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ করা ঠিক নয় । অন্তত এতদিন আমরা এই ভেদাভেদ করিনি । কিন্তু হঠাৎ করে কলেজের মুসলিম মেয়েদের একাংশ হিজাব পরা শুরু করায় বিভেদের সৃষ্টি হচ্ছে ।’
উদুপির কলেজ উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি যশপাল সুবর্ণ বলেন,’কলেজে ১৫০ জন মুসলিম ছাত্রী পড়লেও এতদিন তাঁদের কেউই এই দাবি করেননি । তাঁদের মধ্যে আটটি মেয়ে সিএফআই-এর সদস্য । তাঁরাই অযথা এই বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন ।’
এদিকে হিজাব বিতর্কে মুসলিম ছাত্রীদের উস্কে দেওয়ার পিছনে পিএফআই-এর রাজনৈতিক শাখা সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (SDPI)- এর হাত আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কর্ণাটকের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ । সেই সঙ্গে বিতর্ক উস্কে দেওয়ার পিছনে ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (CFI), পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার ছাত্র শাখা এবং নিষিদ্ধ কট্টরপন্থী সংগঠন জামাত-ই-ইসলামি হিন্দ মত কুখ্যাত র্যাডিক্যাল ইসলামিক সংগঠনের নাম উঠে আসছে ।।